সকালে অফিসে ঢুকে অন্যান্য দিনের মতো কম্পিউটার চালু করেছিলেন রেলের অফিসার। এক মিনিটের মধ্যে মনিটরে ফুটে উঠল একটি বার্তা। তাতে লেখা, ‘এক লক্ষ পাউন্ড দিতে হবে। নইলে সব ডেটা মুছে যাবে।’
প্রথমে ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ডাকার পরেই বোঝা যায়, তাঁর কম্পিউটারে ঢুকে পড়েছে ‘র্যানসমওয়্যার’, সাইবার-দস্যু। এবং হ্যাকারদের দাবি অনুযায়ী টাকা না-দেওয়ায় পরের দিনই কম্পিউটার থেকে মুছে গিয়েছিল সব তথ্য।
ঠেকে শিখেছেন রেলকর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাইবার-দস্যু ঠেকাতে উপযুক্ত বর্মের বন্দোবস্ত হচ্ছে। রেলওয়ে নেটওয়ার্ক আর অন্য কোনও সার্ভিস প্রোভাইডারের উপরে নির্ভর করবে না। রেলের সব তথ্য জমা রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ‘ক্লাউড সার্ভার’। যাত্রীদের তথ্য থেকে শুরু করে রেলের নিজস্ব নথিপত্র— সবই রাখা হবে সেই সার্ভারে।
বেশ কিছু দিন ধরেই মাঝেমধ্যে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের নানা দফতরে সাইবার-দস্যুর হানাদারির খবর মিলছে। ইদানীং তাদের খপ্পরে পড়েছে রেলও। রেল সূত্রের খবর, খড়্গপুরে তাদের বাণিজ্যিক দফতর থেকে শুরু করে কেরলের চার জায়গায় ৫০টিরও বেশি কম্পিউটারে র্যানসমওয়্যার ভাইরাস ঢুকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু নথি নষ্ট করে দিয়েছে। ট্রেন চলাচলের পুরো ব্যবস্থাই এখন কম্পিউটার-নির্ভর। এই অবস্থায় দু’মাস ধরে বিভিন্ন জোনে পরপর হ্যাকার-হানায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে রেল প্রশাসন। তারই ফল রেলের নিজস্ব এই ‘ক্লাউড সার্ভার’।
নিজেদের বিশেষ সার্ভারের সঙ্গে সঙ্গে ‘রেলসারথি’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে রেল। ওই অ্যাপের মাধ্যমে নিজের মোবাইল থেকে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট কাটা, পণ্য বুকিং-সহ সবই করা যাবে। ট্রেনে দেওয়া যাবে খাবারের অর্ডারও।
রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, রেলের কাজকর্মের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে আলাদা করে নেওয়া হয়েছে। সেগুলিতেই বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যেমন, টিকিট বুকিং, পণ্য পরিবহণ সংক্রান্ত বুকিং করতে টাকার লেনদেন এবং রেলের হিসেব সংরক্ষণ। এ ছাড়া রেলের নিত্যদিনের ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা তো গুরুত্বের তালিকায় রয়েছেই।