Durga Puja 2025

৮৫ হাজার থেকে অনুদান বেড়ে ১ লাখ ১০ হাজার! বিদ‍্যুৎ বিলে ছাড় বেড়ে ৮০ শতাংশ, মমতার ‘পুজো উপহার’ ক্লাবগুলিকে

গত বছর পুজো কমিটিগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, এ বছর এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। কিন্তু দিলেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা!

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ১৮:০৫
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আবার বাড়ল পুজোর অনুদান। বাড়ল আরও ২৫ হাজার টাকা। দুর্গাপুজোর জন্য উদ্যোক্তাদের এ বছর ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

গত বছর পুজো কমিটিগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, এ বছর এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। তবে বাস্তবে সেই ঘোষণার চেয়েও ১০ হাজার টাকা বেশি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে যোগ হল বিদ্যুতের ছাড়। পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুতের মাসুলেও ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার জন্য সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী ৫ অক্টোবর পুজো কার্নিভাল হবে কলকাতায়। তার আগে ২, ৩ এবং ৪ অক্টোবর— এই তিন দিন প্রতিমা বিসর্জন হবে।

এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে শারদোৎসব। প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পুজো কমিটিগুলি। সেই আবহে বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের বিভিন্ন পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষকর্তারা, কলকাতা পুরসভা, দমকল বিভাগ, সিইএসসি, পুলিশ প্রশাসন, পরিবহণ ও স্বাস্থ্য দফতরের মতো পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

Advertisement

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করেছেন মমতা। সরকারি অনুদান থেকে শুরু করে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মহিলাদের জন্য পিঙ্ক পুলিশ, স্বাস্থ্য পরিষেবা— সমস্ত ক্ষেত্রেই পুজোর সময় নজরদারি বাড়ানো হয়। এ বারও যাতে তার অন্যথা না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, পুজোমণ্ডপগুলিতে কড়া নজরদারি রাখার কথাও বলেছেন। তিনি জানান, ড্রোন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি চালাতে হবে। মণ্ডপে আসা মহিলাদের নিরাপত্তা, প্রবীণদের সুবিধার দিকটিও পুজো কমিটিগুলিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে যেন সমন্বয় থাকে। সব কন্ট্রোলরুমকে সারা ক্ষণ সক্রিয় রাখতে হবে। ভিড় এড়াতে প্রবেশ এবং বেরোনোর আলাদা পথ রাখতে হবে। পুজোমণ্ডপে পাবলিক অ্যাড্রেসাল সিস্টেম যাতে থাকে, দেখতে হবে সেটাও। বিদেশিদের যাতে কোনও ভাবে সম্মানহানি না হয়। পরিবহণ দফতরকে বলব বেশি গাড়ি চালাতে, যাতে মানুষ সময়ে সময়ে গাড়ি পান বাড়ি ফেরার জন্য। মেট্রোয় যাতে একটু বেশি ক্ষণ চলে, সে বিষয়ে আধিকারিকদের কথা বলতে বলব। লোকাল ট্রেনও যাতে পাওয়া যায় রাতে। পুজোমণ্ডপগুলিতে অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখতে বলব। পদপিষ্টের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটাও দেখতে হবে। বিসর্জনের জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।’’

আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তা নজরে রেখেই অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাদের দাবি, গত বছর লোকসভা ভোট ছিল। তৃণমূল তাতে ভাল ফল করেছিল। সে বছর অনুদান বৃদ্ধি করে পুজো কমিটিগুলিকে ‘পুরস্কার’ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বছর ‘উৎসাহ’ দিলেন! আগামী বছর ভোটের সময় যাতে তারা তৃণমূলের হয়েই কাজ করে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “১ লাখ ১০ কেন, ২ লাখ ১০ দিন। তাতে কিছু এসে যায় না । আগে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ মিটিয়ে দিন। ৬ লক্ষ সরকারি শূন্যপদ পূরণ করুন। তবে আপনারা দেখবেন আগামী দিনে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ৫০০ টাকা করে ভাতা বেড়ে যাবে।”

পাল্টা শাসকদলের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী চান, রাজ্যে নতুন সংস্কৃতির প্রসার ঘটুক। আর উৎসবের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব। ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। এ কথা হামেশাই বলে থাকেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি পুজো কমিটিগুলিও। পুজো কমিটিগুলির একটি বড় অংশের বক্তব্য, এই অনুদানটুকুই তাদের ভরসা। আর ইদানীং যে ভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে অনুদানের অঙ্ক না বাড়ানো হলে সুষ্ঠু ভাবে পুজোর আয়োজন করা মুশকিল।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে রাজ্যের পুজো উদ্যোক্তাদের ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই পুজো বাবদে বিদ্যুতের বিলে ২৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে অনুদানের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা এবং করোনার সময়ে এক লাফে ৫০ হাজার টাকা করা হয়। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৬০ হাজার এবং ২০২৩ সালে ৭০ হাজার টাকা করা হয়। ২০২৪ সালে আরও ১৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। এ বার হল ১ লাখ ১০ হাজার! মাঝখানের সময়ে অনুদানপ্রাপ্ত পুজো কমিটির সংখ্যাও বেড়েছে।

গত বছর আরজি কর আন্দোলনের আবহে রাজ্য সরকারের দেওয়া পুজোর অনুদান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল কিছু পুজো কমিটি। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যারা অনুদান নেবে না, তাদের বাদ দিয়ে নতুন পুজো কমিটিদের অনুদান দেওয়া হবে। গত বছর যে সব পুজো কমিটি অনুদান নেয়নি, তারা এ বার অনুদান নেয় কি না, এখন সেটাও দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement