গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, গত বুধবার তা লেখা হয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম-এ। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করলেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি পোর্টাল তৈরি হবে। তার নাম ‘শ্রমশ্রী’। সেখানে নাম নথিভুক্ত করলে পরিচয়পত্র পাবেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। রাজ্য সরকারের ‘কর্মসাথী’ নামের একটি পোর্টাল রয়েছে। তা-ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট। তা হলে ‘কর্মসাথী’র সঙ্গে ‘শ্রমশ্রী’র ফারাক কী? প্রকল্পে ঠিক কী রয়েছে, সে সম্পর্কে সোমবার বিকেল পর্যন্ত শ্রম দফতরের প্রথম সারির আধিকারিকেরাও ওয়াকিবহাল নন। রাজ্যের শ্রম দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আমি প্রাথমিক স্তরে বিষয়টি দেখেছিলাম। কিন্তু মন্ত্রিসভা ঠিক কী ভাবে প্রকল্পটিকে অনুমোদন দিয়েছে, তা এখনও জানি না। পুরোটা দেখতে সময় লাগবে।’’ প্রাথমিক স্তরে কী ছিল? তাঁর কথায়, ‘‘নানাবিধ কারণে যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরে আসছেন, তাঁদের জন্য তৈরি হচ্ছে ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টাল।’’ অর্থাৎ, ভিন্রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যে ফেরা শ্রমিকদেরও পরিচয়পত্র দেবে রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী সোমবার বলেন, ‘‘বাংলায় যে ২২ লক্ষ ৪০ হাজার শ্রমিক বাইরে আছেন, তাঁরা সকলে ‘শ্রমশ্রী’র সুবিধা পাবেন। যাঁরা নাম নথিভুক্ত করেননি, তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গত কয়েক দিনের মধ্যে যাঁরা রাজ্যে ফিরে এসেছেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টালে নাম তুললে তাঁদের একটা আইকার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে রাজ্য সরকারের সুযোগসুবিধা পাবে।’’
ভিন্রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরলেই শ্রমিকদের এককালীন ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে। বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না-হওয়া অবধি এক বছর পর্যন্ত তাঁরা প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পাবেন। রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও দেওয়া হবে তাঁদের। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার (এসআইআর) আবহে শাসক তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার চায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরুন। তার জন্য সাংগঠনিক ভাবে প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল তৃণমূল। সরকারের প্রকল্প ঘোষণায় তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে অভিমত অনেকের। বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু অংশের। অনেকের অভিমত, তৃণমূলের এই ‘চাওয়া’র সঙ্গে জুড়ে রয়েছে জনসমর্থনের ভিত্তির সমীকরণও।