মিষ্টি পাঠালেন মমতা, বঙ্গে এসে রাজনাথ বিষহীনই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যের কথা রাজনীতিতে সুবিদিত। বাংলায় এসে মমতা ও তাঁর সরকারকে আক্রমণ না-করাই গত ক’বছরে দস্তুর করে ফেলেছেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২০
Share:

প্রবেশ: বিজেপির কর্মিসভার বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। জাতীয় গ্রন্থাগারে শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যের কথা রাজনীতিতে সুবিদিত। বাংলায় এসে মমতা ও তাঁর সরকারকে আক্রমণ না-করাই গত ক’বছরে দস্তুর করে ফেলেছেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা। কিন্তু সেই তিনি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেই যখন বেছে বেছে মমতার খাসতালুকে কর্মিসভা করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ, তখন বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে আশা জেগেছিল— এ বার অন্তত ব্যতিক্রম হবে। চড়া সুরে না হোক মমতার কিছু না কিছু সমালোচনা হয়তো করবেন রাজনাথ। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের এ বারও হতাশ করলেন ঠাকুর নেতা।

Advertisement

বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি হল এবং জাতীয় গ্রন্থাগারের অডিটোরিয়ামে দু’টি কর্মিসভার একটিতেও মমতার বিরুদ্ধে তোপ দাগা দূর অস্ত্, তাঁর নামই উচ্চারণ করেননি রাজনাথ। দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দিতে এ দিনই কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর উড়ে গিয়েছেন রাজনাথ। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তখন কলকাতা বিমানবন্দরে গিয়ে মমতার তরফে তাঁকে পুষ্পস্তবক, শাল এবং মিষ্টি দিয়ে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ফিরহাদ রাজনাথকে বলেছেন, ‘কাল ১লা বৈশাখ। দিদি আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং সামান্য উপহার পাঠিয়েছেন।’ রাজনাথ সহাস্যে বলেছেন, ‘নমস্তে’।

এ দিন কর্মিসভার পর সাংবাদিক বৈঠকে সারদা এবং নারদ কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজনাথ বলেন, ‘‘আইন আইনের কাজ করবে। বিজেপি সরকার অন্য সরকারের মতো এ সব বিষয়ে নাক গলায় না।’’ সম্প্রতি আরএসএস-এর অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মমতার সরকার ‘জেহাদি’দের প্রশ্রয় দিচ্ছে। তা নিয়ে প্রতিক্রিয়াতেও রাজনাথ বলেন, ‘‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে অনেক কথাই বলতে পারি না।’’ বিজেপি কর্মীদের বক্তব্য, বিতর্ক এড়াতে সাংবাদিক বৈঠকে ওই সব প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তরই দিয়েছেন রাজনাথ। কিন্তু কর্মিসভায় তিনিও এক জন দলের কর্মী। সেখানে তিনি মমতার বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণের বার্তা দিতে পারতেন। সারদা-নারদ ইত্যাদি নিয়ে আরও সুর চড়াতে পারতেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:রেলের বিজ্ঞাপনে সুদীপের ‘গৌরবময় উপস্থিতি’ কেন?

কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসায় বিজেপির নিচুতলার কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত। ফলে বৈঠক শুরু হতেই এক কর্মী রাজনাথকে প্রশ্ন করেন, সারদা-তদন্তে সিবিআই কি কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে এক বারও ডাকতে পারে না? নারদে অভিযুক্ত আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না? অবসরের পর সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের রাজ্যের ডিজি হওয়া ঠেকাতে কেন্দ্র কি কিছুই করতে পারে না? জবাবে রাজনাথ বলেন, সরকারের কাজ সরকার করছে। দলের কাজ দল করুক। কর্মীরা অভিযোগ করেন, তৃণমূল জেলায় জেলায় তাঁদের মারধর করছে, পুলিশের মদতে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। জবাবে রাজনাথ বলেন, তিনিও তো আট বার জেলে গিয়েছিলেন! কর্মীরা তাঁকে জানান, বিরোধীরা তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁতের কথা প্রচার করছে। রাজনাথ বলেন, এখানে কর্মীরা যত লড়াই করবেন, তত লোকে বুঝবে ওই আঁতাঁত নেই।

ক’দিন আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছিলেন, এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার যা অবস্থা, তাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সাংবাদিক বৈঠকে রাজনাথ বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কোনও সমস্যা হলে রাজ্যকেই আবেদন করতে হয়।’’ তবে রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন রাজনাথ। তারই সূত্র ধরে তাঁকে রামনবমীতে গেরুয়া শিবিরের অস্ত্র নিয়ে মিছিল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘সব ধর্মের মানুষের ধর্মাচরণে সুরক্ষা দেওয়া রাজ্য সরকারের কর্তব্য।’’ তবে কাঁথি ভোট প্রসঙ্গ তুলে রাজনাথ বলেন, ‘‘পরের বার বিজেপি সরকার।’’

রাজনাথ নির্বিষ হলেও হাওড়ার সাঁকরাইলে জনসভায় মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রের জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী। তিনি বলেন, ‘‘মমতা আজ যেখানে, সেখানে তাঁকে পৌঁছে দিতে বিজেপির অবদান রয়েছে। তেমনই বিজেপি-ই পারে মমতাকে হটাতে।’’ তিস্তার জলবণ্টন নিয়েও খোঁচা দিয়ে উমা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কোনও কিছুতেই খুশি হন না! কিন্তু জল নিয়ে রাজনীতি হতে দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন