আশ্বাস: সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে এখনও উদ্বেগের কিছুই দেখতে পাচ্ছে না রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার খোদ মুখ্যমন্ত্রীই বলে দিলেন, পরিস্থিতি মোটেই উদ্বেগজনক নয়। তাঁর দাবি, এ নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলি মুনাফা বাড়াতে চটজলদি রিপোর্ট দিয়ে বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে। কিন্তু কলকাতার উপকণ্ঠে এবং রাজ্যের অন্য কিছু জেলায় যে ভাবে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে, তা সে ডেঙ্গি হোক বা অন্য কিছু, কী ভাবে তার মোকাবিলা করা হবে, সে সম্পর্কে কোনও দিশা দেখাননি তিনি। এ রাজ্যে এখনও ডেঙ্গিতে কত জন আক্রান্ত হয়েছেন, তার হিসেবও যে নেই, তা-ও এ দিন কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি।
প্রশাসনের নিচুতলায় ডেঙ্গি নিয়ে রাখঢাক ছিলই। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী কার্যত একই পথে হাঁটায় স্বাস্থ্যকর্তারা ফের ‘পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়’ বলে সরব হতে শুরু করেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পরীক্ষার বাইরে র্যাপিড টেস্ট করে ল্যাবরেটরিগুলি বলে দিচ্ছে ‘এনএস-১ রিঅ্যাক্টিভ’। এতে রোগীরা অযথা ভয় পাচ্ছেন। এ ধরনের ল্যাবরেটরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মায়ের থেকে শিশুর ডেঙ্গি মানুষে, মশার, নয়া তথ্য গবেষণায়
এ দিন নবান্নে স্বাস্থ্য দফতর-সহ পঞ্চায়েত, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন কলকাতা ও বিধাননগরের মেয়ররাও। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডেঙ্গিতে এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০। তার মধ্যে ছ’জনের ক্ষেত্রে ডেঙ্গিই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। গুজরাত, তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্রে সোয়াইন ফ্লু এবং ডেঙ্গিতে কয়েকশো মানুষের মৃত্যুর ফিরিস্তি দিয়ে তিনি বোঝান, এ রাজ্যের অবস্থা তত খারাপ নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রশাসন কোনও খবর গোপন করছে না। একদম বাজে কথা। আমাদের কাছে তথ্য থাকে। তার ভিত্তিতেই আমরা কথা বলি।’’ তাঁর দাবি, দেগঙ্গা বা বনগাঁয় ন’জন ডেঙ্গিতে মারা যাওয়ার খবর পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এঁদের মধ্যে এক জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে ডেঙ্গি ২-এ আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫% এবং ডেঙ্গি ৮-এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৪% রোগী। বাকি ১% ডেঙ্গি ১ কিংবা ডেঙ্গি ৩-এ।’’ ডেঙ্গি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে রোগীদের রক্তের নমুনা বেঙ্গালুরুর নিমহ্যান্স এবং পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। আর ডেঙ্গির নতুন সেরোটাইপ? বিশ্বরঞ্জনবাবুর জবাব, ‘‘এখনও তেমন কিছু জানি না।’’ প্রকোপ যে তেমন নয়, বোঝাতে স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা বলেন, ‘‘এখনও কোথাও প্লেটলেটের অভাব হয়নি। গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে সাধারণ ভাবে প্লেটলেটের যে চাহিদা থাকে, সেটাই রয়েছে।’’
অর্থাৎ? স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের একাংশ স্বীকার করছেন, এ দিনের বৈঠক আখেরে কোনও দিশা দেখাতে পারল না। এক কর্তার কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী যদি সবাইকে একযোগে এর প্রতিরোধের জন্য সক্রিয় হতে বলতেন, তা হলে হয়তো ফলটা অনেক ভাল হতো।’’ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ডেঙ্গির তথ্য লুকোনোর অভিযোগ আনল রাজ্য বিজেপি-ও। এ দিন বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি সুভাষ সরকারের দাবি, দেগঙ্গা, হাবড়া, শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি মহামারীর আকার নিয়েছে। অথচ, সরকারের ডেঙ্গি পরীক্ষা, প্লেটলেট দেওয়া— কোনও কিছুরই পরিকাঠামো নেই। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘দমদমের মশা যত ক্ষণ না কালীঘাটে এসে কামড়াচ্ছে, তত ক্ষণ সরকারের হুঁশ ফিরবে না।’’