‘পাশে আছি’ বোঝাতেই ধুমারপাহাড়ে ‘দিদি’র সভা

গ্রামীণ সেই জনপদের সব থেকে কাছে যেখানে গড়ে তোলা গিয়েছে হেলিপ্যাড, চব্বিশ ঘণ্টার মুর্শিদাবাদ সফরে এসে এ বার সেখানেই প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর, সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

হদ্দ অজ পাড়া গাঁয়ে এখন শহুরে ব্যস্ততা। ম্যাড়াপ-হেলিপ্যাড-ঘনঘন ধুলো ওড়াচ্ছে পুলিশের জিপ। জায়গাটির নাম ধুমারপাহাড়, অদূরে বাহালনগর, অক্টোবরের শেষে যে প্রান্তিক গ্রামটিকে টিভির পর্দায় তামাম ভাতবর্ষ চিনে গিয়েছে। কাশ্মীরে জঙ্গিহানায় নিহত পাঁচ শ্রমিকের আদি ঠিকানা।

Advertisement

গ্রামীণ সেই জনপদের সব থেকে কাছে যেখানে গড়ে তোলা গিয়েছে হেলিপ্যাড, চব্বিশ ঘণ্টার মুর্শিদাবাদ সফরে এসে এ বার সেখানেই প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল বাহালনগরের কাছে সভা করার, সে জন্যই সভাস্থল হিসেবে ওই জায়গাটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’

যা শুনে, জেলা বিজেপির সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো সমস্যার সমাধান করেন না উল্টে লাশের রাজনীতি করেন। সে জন্য বাহালনগরের কাছে ধুমারপাহাড়ের কাছে সভা করতে আসছেন। অথচ ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাইরে যেতেই হত না যদি এ রাজ্যেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

Advertisement

তবে যে কারণটা গৌরীশঙ্কর উহ্য রেখে দিচ্ছেন, জেলার কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী উস্কে দিচ্ছেন সেটাই— ‘‘এ তো ভোটের রাজনীতির নামান্তর। খাল কেটে রাজ্যে বিজেপি এনেছেন মমতা নিজেই। এ বার লোকসভায় ওই এলাকায় বিজেপি ৪২ হাজার ভোট পেতেই টনক নড়েছে। তাই বাহালনগরের কাছে সভা করতে চলেছেন তিনি।’’

জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘বিরোধীরা তো কোনও সৎ প্রচেষ্টা নিতে পারেন না, তাই দিদি বাহালনগরের পাশে দাঁড়াতেই ভয় পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কাশ্মীরে বাঙালি শ্রমিক খুন হওয়ার দায় কেন্দ্র নিল না। মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দূরে থাক, আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রী এ নিয়ে বিবৃতিও দিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এখন চোখ টাটাচ্ছে।’’

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে কাশ্মীরে জঙ্গিহানায় মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির পাঁচ বাঙালি শ্রমিক খুন হওয়ার পরেই দিল্লিকে দায়ি করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে দাবি করেছিলেন মমতা। বুধবার দুপুরে আদতে প্রশাসনিক সভা হলেও কাশ্মীরে মৃত পাঁচ বাঙালি শ্রমিকের পরিবারকে সাক্ষী রেখে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি যে সুর চড়াবেন তা বলাই বাহুল্য। সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘‘আদতে প্রশাসনিক সভা হলেও সাগরদিঘির এই সভা স্মরণসভায় পরিণত হবে। শুধুমাত্র সাগরদিঘির ৩০ হাজার মানুষ সেখানে জমায়েত হবেন।’’

তিন বছর আগে নোট বাতিল করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তার জেরে কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছিলেন অনেক শ্রমিক। ‘সমর্থন’ প্রকল্প থেকে ভিন রাজ্যে কাজ-হারা সেই সব মানুষদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বারে ওই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে কাশ্মীর ফেরত শ্রমিকদেরও। তাঁদেরও ওই দিন ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেবে শ্রমদফতর। কাশ্মীর ফেরত ২০ জন শ্রমিকের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে এর আগেও, কাশ্মীর থেকে কফিনবন্দি দেহ কলকাতায় ফিরতেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের হাত দিয়ে তাঁদের দেহ বাহালনগরে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিনই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আর্থিক সাহায্য নিয়ে সাগরদিঘির গ্রামে পৌঁছে ছিলেন। গত সপ্তাহে বহরমপুরে দলের এনআরসি বিরোধীসভায় এসে শুভেন্দু মৃতদের পরিবার থেকে এ মাসেই ৪ জনকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়ে গিয়েছেন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের হাতে নিয়োগপত্রও তুলে দিতে পারেন বলে আশায় বুক বাঁধছে বাহালনগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন