বিধায়কদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার বিধানসভায় সুমন বল্লভের তোলা ছবি।
ভোট চলাকালীনই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। বিপুল জয়ের পর বিধানসভায় শনিবার বিধায়ক হিসেবে শপথ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরেই ফের কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। বললেন, ‘‘দিল্লি থেকে কমিশন কিছু লোক পাঠিয়ে মস্তানি করেছে। এ বার কমিশনের সেই সব কাজকর্ম চ্যালেঞ্জ করা হবে।’’
তবে তৃণমূল কমিশনকে আদালতে টেনে নিয়ে গিয়ে চ্যালে়ঞ্জ করবে, নাকি জাতীয় স্তরে নসীম জৈদীর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হবে— তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘কমিশনের বিরুদ্ধে সচরাচর আদালতে যাওয়া হয় না। প্রয়োজনে সংসদে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সরব হবে দল।’’ এ দিন বিধানসভায় নবনির্বাচিত বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একে একে দেখা করতে আসেন। তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন বাড়াবাড়ি না করলে তাঁরা আরও বড় ব্যবধানে জিততেন। আসনও বাড়তে পারত আরও।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী কালীমন্দির পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। পাড়ার লোকেরা পুরসভার কল থেকে জল নিতে গেলে, তাতেও বাদ সাধা হয়। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে জানান, ঠিকই, তাঁর পাড়াতেও মাইকে ঘোষণা করে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল কমিশন। তার ফলে বহু ভোটার ভোট দিতে যাননি।
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী দলের দুই নেতা সুব্রত বক্সি এবং মুকুল রায়কে সমস্ত প্রমাণ জোগাড়ের নির্দেশ দেন। কমিশনকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
ভোট শেষের পরেই দলের সহ-সভাপতি মুকুল রায় জানিয়েছিলেন, সংসদের অধিবেশন শুরু হলে বিষয়টি সেখানে উত্থাপন করবে তৃণমূল। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও হস্তক্ষেপ দাবি করা হবে। ঘরোয়া আলোচনায় দলের নেতারা বলছিলেন, নির্বাচন কমিশনে নসীম জৈদীর নিয়োগ করা হয়েছিল কংগ্রেস জমানায়। তিনি সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের ঘনিষ্ঠ। তাঁর কাজেও সেই পক্ষপাত রয়েছে।
মুকুলবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিবেক সহায় নামে এক অফিসারকে ভোটের কাজে নিয়োগ করেছিল কমিশন। উনি কী ভাবে ভোটে দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তা নিয়েও তদন্ত চাইছি। ওই অফিসার এখানে এসে আলাদা কম্যান্ড তৈরি করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লেগেছিলেন।’’ ওই অফিসারের নির্দেশেই ভোটের সময় বহু মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন বলে অভিযোগ এনে মুকুলবাবু বলেন, ‘‘বিবেক রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর ঘনিষ্ঠ। সব আইন ভেঙে কমিশন ওই অফিসারকে কলকাতায় বসিয়ে রেখে মানুষের উপর অত্যাচার করেছে।’’ কলকাতায় কম ভোট পড়ার জন্যও এ দিন কমিশনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আরও ৩-৪% ভোট পড়তে পারত কলকাতায়। কমিশনের সন্ত্রাসের জন্য তা হল না।’’