রং করার বই নিয়ে বসে ছোটবেলায় অনাবিল আনন্দ পাননি, এমন মানুষ কম। কিন্তু বড়দের মনের ভাঁজে যে অজস্র মেঘ আর ঝড়, রং করার বই কি সেই মেঘ সরাতে পারে?
মনোবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, পারে। সাময়িক ভাবে হলেও রং করার বই নিয়ে বসলে কমতে পারে মানসিক চাপ, হতাশা। আর তাই বইবিক্রেতারা এখন বড়দের জন্যও রং করার বই নিয়ে আসতে শুরু করেছেন বাজারে।
শিশুদের জন্য যেমন কালো রং-এর বর্ডার দিয়ে ফুল, গাছ, পাখির আকৃতি করা থাকে আর বর্ডারের ভিতরের ফাঁকা অংশে নিজের মনের মতো রং দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়— এ বার বড়দের জন্যও বিভিন্ন কবিতা, গল্প, উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে একই ভাবে কালো বর্ডার দিয়ে আকৃতি করা থাকবে। সাদা অংশ প্রাপ্তবয়স্ক মন নিজেদের মতো করে রাঙিয়ে দেবে। ইতিমধ্যেই খলিল জিব্রানের ‘দ্য প্রফেট’-এর কবিতাগুলিকে ভিত্তি করে সুজয় বাত্রা তৈরি করেছেন ‘দ্য মিস্টিক্যাল ওয়র্ল্ড’ নামে একটি রং করার বই। ফ্রান্সিস হজসন বার্নেটের ‘দ্য সিক্রেট গার্ডেন’-কে ভিত্তি করেও রংয়ের বই বাজারে এসেছে। আবার কয়েকটি আলপনার নকশা নিয়ে তৈরি হয়েছে, ‘রিফ্রেশিং মন্ডলা’।
মনোবিদদের মতে, পরিকল্পনাটি সাধু। কারণ অল্পবিস্তর সব মানুষই ফিরে যেতে চান ছোটবেলার দিনগুলিতে। প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে রয়েছে নানা রকম জটিলতা। যার জেরে তাঁরা নানা রকম মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন। মানসিক চাপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং মাঝে মাঝে জীবনের প্রতি নেতিবাচক ভাবনাও তৈরি করে।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘যে কোনও সৃজনশীল কাজ মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে রঙের ব্যবহার মানুষের মনে আনন্দ তৈরি করে।’’ একমত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামও। তিনি বলেন, ‘‘কাজের সঙ্গে যখন রঙ ও উজ্বলতা জড়িয়ে থাকে তখন সেটা মনকে শান্ত করতে আরও বেশি সাহায্য করে। এই বইগুলি সেই কারণেই গ্রহণযোগ্য।’’
বই বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, রং করার বই নিয়ে ভালই আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। রূপা পাবলিকেশনসের এমডি কপিশ মেহরা বলেন, ‘‘এই নতুন ভাবনা মানুষ গ্রহণ করেছেন। রূপার তরফ থেকে চারটি ভারতীয় উপন্যাসকে রং করার বই হিসাবে তুলে ধরার পরিকল্পনা চলছে।’’ কলকাতার প্রকাশকেরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন। বি বুকসের সিইও এষা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, কলকাতার পাঠকদের জন্য তাঁরা খুব শীঘ্রই আনতে চলেছেন রং করার বই। দিল্লির এক শিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এষা জানাচ্ছেন, মনোবিদদের পরামর্শ নিয়েই তাঁরা এই বই তৈরিতে হাত দিয়েছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁরা আনছেন ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ কমিকসের রং করার বই। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এর দ্বারা মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি ও হাতের পেশি একসঙ্গে কাজ করবে। যার ফলে শুধুই মানসিক সমস্যা নয়, শারীরিক রোগেরও উপশম মিলবে।’’
বাংলাতেও হতে পারে না এমন কিছু? পত্রভারতীর পক্ষ থেকে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রকাশক হিসেবে মনে হচ্ছে এই পরিকল্পনা খুবই অভিনব। কিন্তু বাংলা বইয়ের পাঠক এই ধারণাকে কতটা গ্রহণ করবেন সেটা পরীক্ষাসাপেক্ষ।’’ বাংলা বাজারে রংয়ের বইয়ের চাহিদা নিয়ে একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আনন্দ পাবলিকেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ইংরেজি সাহিত্যের পাঠক ও বাংলা সাহিত্যের পাঠকের মানসিকতা এক নয়। তাই এর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি পর্যালোচনা না-করে বাংলায় রং করার বই তৈরির পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।’’