পাখিদের স্বস্তি দিন, নির্দেশে বিপাকে রেল

জাতীয় পরিবেশ আদালত মনে করে, ট্রেনের বাঁশিতে ঝিলের পরিযায়ী পাখিরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। তাই ঝিল সংলগ্ন এলাকায় ট্রেনের বাঁশি থামানো হোক। সেই নির্দেশ শুনে বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, সাঁতরাগাছি দিয়ে দিনে প্রচুর ট্রেন যাতায়াত করে। রয়েছে শান্টিংয়ের ব্যবস্থাও।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

এ যেন পাখি রাখি না মানুষ! এবং এ দুইয়ের মাঝে পড়ে ফাঁপরে রেলকর্তারা।

Advertisement

জাতীয় পরিবেশ আদালত মনে করে, ট্রেনের বাঁশিতে ঝিলের পরিযায়ী পাখিরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। তাই ঝিল সংলগ্ন এলাকায় ট্রেনের বাঁশি থামানো হোক। সেই নির্দেশ শুনে বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, সাঁতরাগাছি দিয়ে দিনে প্রচুর ট্রেন যাতায়াত করে। রয়েছে শান্টিংয়ের ব্যবস্থাও। ফলে হর্ন না বাজিয়ে ট্রেন চালালে বিপদ ঘটতে পারে। হতে পারে প্রাণহানিও। এই পরিস্থিতিতে ফের রাজ্যের পরিবেশ দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছে রেল। বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চকে ফের নির্দেশ বিবেচনা করার আর্জি জানানো হতে পারে বলেও রেল সূত্রের খবর।

Railর দূষণ এবং পরিযায়ী পাখিদের বিপদ নিয়ে কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিরুদ্ধে ঝিলের জলে নোংরা ফেলার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি, ট্রেনের তীব্র হর্নের দাপটে পাখিদের জীবন অতিষ্ঠ হওয়ার কথাও জানান সুভাষবাবু। সেই আর্জির পরিপ্রেক্ষিতেই ঝিল এলাকাকে ‘সাইলেন্স জোন’ বলে ঘোষণা
করতে বলা হয়।

Advertisement

রেলের যুক্তি, ওই এলাকায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রেন চলাচল করছে। এত দিন ধরে হর্ন বাজানো হলেও পরিযায়ী পাখিদের উপরে তার প্রভাব পড়েনি। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, স্টেশনে ঢোকার মুখে বা লেভেল ক্রসিং পেরোনোর সময়ে হর্ন বাজানো জরুরি। সাঁতরাগাছির মতো ব্যস্ত স্টেশনের আগে একাধিক লেভেল ক্রসিংও রয়েছে। তাই হর্ন না বাজালে বিপদের আশঙ্কা ষোলো আনা। রেলকর্তারা বলছেন, শব্দ ঠেকাতে সাঁতরাগাছি ঝিলের চারপাশে গাছ লাগানোর কথা বলেছেন
তাঁরা। ট্রেনের শব্দ পাখিদের ক্ষতি করে না, এই যুক্তির সমর্থনে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

সাঁতরাগাছি ঝিলের পাখিদের নিয়ে সমীক্ষা করে একাধিক পক্ষীপ্রেমী সংগঠন। তাদের একটির কর্মকর্তা শুভঙ্কর মান্নার বক্তব্য, ‘‘ট্রেনের বাঁশির শব্দে পাখিদের মধ্যে কোনও অস্থিরতা বা চঞ্চলতা কিন্তু লক্ষ করিনি। শান্টিংয়ের শব্দে কখনও কখনও উড়ে যায়।’’ পক্ষীপ্রেমীদের অভিমত, উৎসবের সময়ে ঝিলের চারপাশে মাইক বাজানো হয় বা বাজি ফাটানো হয়। সেই সব শব্দ পাখিদের ক্ষতি করে। শুভঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘সরস্বতী পুজোর সময়ে ঝিল কার্যত পাখিশূন্য হয়ে যায়।’’

রেলের যুক্তি অবশ্য পুরোপুরি মানতে চায়নি পরিবেশ আদালত। ১০০ বছর ধরে হর্ন বাজিয়ে ক্ষতি হয়নি, এমন সিদ্ধান্তে রেল পৌঁছল কী করে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশে ফের জানানো হয়েছে, ট্রেন এবং সাঁতরাগাছি স্টেশনের লাউ়ডস্পিকার থেকে বেরোনো শব্দ কমাতেই হবে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত কী কী পদ্ধতি রয়েছে, তা রেলকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছি ঝিল সংলগ্ন রাস্তাকে সাইলেন্স জোন ঘোষণা করতে আগেই বলা হয়েছিল। এ বার আদালতের নির্দেশ কী ভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার
জন্য রাজ্যের পরিবেশসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন