পুরভোটে বিক্ষিপ্ত অশান্তি, ‘উধাও’ কমিশন

উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলে রবিবার যে ৭টি পুরসভায় ভোট হল, তার মধ্যে ৬টিই ছিল শাসক দলের দখলে। সাংগঠনিক ভাবে বিরোধীরা শাসক শিবিরের সঙ্গে খুব এঁটে ওঠার জায়গায় ছিল, এমনও নয়। তাই ভোট নিয়ে আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবু তার মধ্যেও যেটুকু সংশয় যেখানে ছিল, সেখানে ‘জিতে নেওয়া’র কৌশল ছিল শাসক পক্ষের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২০
Share:

ধুন্ধুমার: দুর্গাপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বুথ দখলের অভিযোগে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল বিজেপি। অবরোধ তুলতে শেষ পর্যন্ত লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। রবিবার। ছবি: শৈলেন সরকার।

তিন মাস আগের ৭টি পুরসভার ভো়টেরই যেন প্রতিচ্ছবি! সেই দুষ্কৃতী বাহিনীর দাপটে বিক্ষিপ্ত অশান্তি। সেই বিরোধীদের তরফে ভোট বাতিলের দাবি। সেই শাসক দলের অভিযোগ অস্বীকার। এবং সেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কার্যত অনুপস্থিতি! শাসক ও বিরোধীদের তরজায় একই ছবি দেখা গেল এ বারের ৭টি পুরসভার ভোটেও।

Advertisement

উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলে রবিবার যে ৭টি পুরসভায় ভোট হল, তার মধ্যে ৬টিই ছিল শাসক দলের দখলে। সাংগঠনিক ভাবে বিরোধীরা শাসক শিবিরের সঙ্গে খুব এঁটে ওঠার জায়গায় ছিল, এমনও নয়। তাই ভোট নিয়ে আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবু তার মধ্যেও যেটুকু সংশয় যেখানে ছিল, সেখানে ‘জিতে নেওয়া’র কৌশল ছিল শাসক পক্ষের। তার জন্যই এ দিন বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে বলে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ। ভোট দিতে বাধা পেয়ে কোথাও পুলিশের দিকে ইট ছোড়া হয়েছে, কোথাও সড়ক অবরোধ হয়েছে। ভোটের নামে প্রহসনের বিহিত করতে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে বিরোধী সিপিএম। বিভিন্ন জেলায় পুরভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও নেতা অরূপ বিশ্বাস, শুভেন্দু অধিকারী, গৌতম দেব, শঙ্কর সিংহেরা অবশ্য দাবি করেছেন, নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে।

মোট ৭টির মধ্যে দুই শিল্পনগরী দুর্গাপুর ও হলদিয়া নিয়েই সব চেয়ে বেশি অভিযোগ বিরোধীদের। দুর্গাপুরে বোমাবাজি, শূন্যে গুলি, গাড়ি ভাঙচুরে তৃণমূলের পাশাপাশি নাম জড়িয়েছে বিজেপি-রও। হলদিয়ায় ভোট দিতে পারেননি সিপিএম বিধায়ক তথা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী তাপসী মণ্ডলও। প্রার্থী অপহরণের অভিযোগও উঠেছে সেখানে। পাঁশকুড়ায় কোথাও বাম প্রার্থীকে বন্দুক তাক, কোথাও বিজেপি প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ এসেছে। আবার নলহাটিতে ভোট করিয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের ‘রাখি বাহিনী’! প্রবল বৃষ্টির দাপটে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি ও বুনিয়াদপুরে ভোট বরং ছিল তুলনায় ঘটনাবিহীন। বুনিয়াদপুরে শেষ বেলায় শাসক ও বিরোধীর কিছু সংঘর্ষের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নলহাটি দাপাল রাখি-বাহিনী

কিন্তু অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কখনওই পাওয়া যায়নি বলে একযোগে সরব হয়েছেন সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের আইনের সীমাবদ্ধতা এবং এই সরকারের আধিপত্যের মধ্যেও মীরা পাণ্ডে, সুশান্ত উপাধ্যায়েরা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ লাগাতার ‘মেরুদণ্ডহীনতা’র পরিচয় দিয়ে চলেছেন!

কমিশনার অবশ্য এ দিন মুখ খোলেননি। কমিশনের তরফে প্রাথমিক হিসাবে জানানো হয়েছে, গড়ে ভোট পড়েছে ৭৭.৩%। তার মধ্যে ধূপগুড়িতে ৮৮.৪%, বুনিয়াদপুরে ৮০.৮%, কুপার্স ক্যাম্পে ৯২.৮%, হলদিয়ায় ৮৬.৭%, পাঁশকুড়ায় ৮১%, দুর্গাপুরে ৭৯.৮% ও নলহাটিতে ৮৭.৬% ভোট পড়েছে। নানা জায়গা থেকে অভিযোগ এলেও রাত পর্যন্ত কমিশন পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে শুধু পাঁশকুড়া পুরসভার একটি বুথে। সেখানে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র ভাঙচুরের অভিযোগ ছিল।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের দাবি, তিন মাস আগে পুরভোটে সন্ত্রাস সত্ত্বেও এ দিন মানুষ সকালে ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের বহিরাগত বাহিনী মানুষকে বাধা দিয়েছে। আর কমিশন অবাধ ভোট নিশ্চিত করার বদলে শাসক দলের ভোটলুঠে ‘মদত’ দিয়েছে! সেলিমের কথায়, ‘‘আমরা এই নির্বাচন রদ করে নতুন করে ভোটের দাবি জানাচ্ছি। কমিশন কোনও ব্যবস্থা না নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবতে হবে।’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও অভিযোগ, যেখানেই বিরোধীদের কিছু অস্তিত্ব আছে, সেখানেই সন্ত্রাস চালিয়ে সুষ্ঠু ভোট হতে দেওয়া হয়নি। দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই কমিশনারকে নিয়ে আমরা হতাশ। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাননি বলেই এই রকম হিংসাত্মক ভোট হয়েছে। জনমতের প্রতিফলন হয়নি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তীরও মন্তব্য, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে! মানুষের উপরে বিন্দুমাত্র আস্থা থাকলে ২১১ জন বিধায়কের দল কি এই ভাবে বুথ দখল করতো?’’

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘সংগঠন বলে কিছু নেই। বিরোধীরা কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করতে চাইছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement