—প্রতীকী চিত্র।
১৯ বছর বয়সেই দ্বিতীয় সন্তান। আর সেই সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হল প্রসূতির। দিন কয়েক আগে রাজ্যের প্রসূতি-মৃত্যুর পর্যালোচনা বৈঠকে এমন তথ্য পেয়ে বিস্মিত স্বাস্থ্যকর্তারাও। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, যে সময়ে ওই প্রসূতি গর্ভবতী হয়েছেন তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮। প্রথম সন্তান হয়েছে তারও দু’বছর আগে।
শুধু মালদহের এই ঘটনাই নয়। স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরের খবর, প্রতি বছর রাজ্যে যত প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে, তাদের অন্তত ১৪ শতাংশ নাবালিকা। ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বছরে রাজ্যে যত প্রসব হয়েছে তার মধ্যে নাবালিকা প্রসূতি ছিল ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। গত আর্থিক বছরে (২০২৪-২০২৫) তা ছিল ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “দুই শতাংশ হার কমলেও, বিষয়টি এখনও উদ্বেগের। কয়েকটি জেলাকে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিতও করা হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা সব থেকে বেশি মুর্শিদাবাদ, রামপুরহাট, বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায়। এ ছাড়াও উদ্বেগের তালিকায় রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, বসিরহাট, পশ্চিম মেদিনীপুর, নন্দীগ্রাম, নদিয়া, পুরুলিয়া ও পূর্ব বর্ধমান। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, ওই সমস্ত স্বাস্থ্য জেলা কিংবা সংলগ্ন মেডিক্যাল কলেজগুলিতে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নাবালিকা কোনও প্রসূতি ভর্তি হলে সেই তথ্য তৎক্ষণাৎ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে হবে। কিন্তু তাতে খুব উপকার হয় না বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, “আগে গোড়ার গলদ দূর করতে হবে। অর্থাৎ নাবালিকা বিয়ে রুখতে হবে।”
রাজ্যের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার দাবি, “নাবালিকা বিয়ে রুখতে উদ্যোগের খামতি নেই। বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারেই তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেখানে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধার কথা জানিয়ে, সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।” কিন্তু এত কিছুর পরেও নাবালিকা বিয়ে যে একেবারে বন্ধ করা যায়নি, তার প্রমাণ মিলছে স্বাস্থ্য দফতরের এই পরিসংখ্যানে।
এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, নাবালক কোনও দম্পতি পাওয়া গেলে গর্ভধারণ সম্পর্কে তাদের সচেতন করার মূল দায়িত্ব আশাকর্মীদের। কারণ, নিজের এলাকায় কোন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে তা সহজে জানতে পারেন ওই কর্মীরাই। ওই কর্তার কথায়, “ভাতা-সহ বিভিন্ন কারণে আশাকর্মীদের বড় অংশ ক্ষুব্ধ। তাতে কাজে অসুবিধা হচ্ছে। এর পরে, তাঁরা বোঝালেও যে সর্বত্র ফল মিলছে তেমন নয়। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার।” রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যুর নেপথ্যে ‘সিজ়ার’-ও একটি বড় কারণ বলে দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, গত আথির্ক বছরে রাজ্যে প্রায় ১৪ লক্ষ প্রসব হয়েছে। তার মধ্যে ৯০০ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, যাদের ৭৬ শতাংশের ‘সিজ়ার’ হয়েছিল।
সূত্রের খবর, প্রসূতি-মৃত্যুর অডিটে স্বাস্থ্যকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিনিয়র চিকিৎসকেরা ‘সিজ়ারে’র সময় তো বটেই, পরবর্তী সময়েও উপস্থিত থাকছেন না। ‘সিজ়ার’ থেকে শুরু করে পরবর্তী কোনও সমস্যাতেও ‘কল-বুক’ পাঠানো হলে যে চিকিৎসক এসে প্রসূতিকে দেখছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই চিকিৎসক-পড়ুয়া বা সিনিয়র রেসিডেন্ট। প্রসূতি-মৃত্যুর অডিটে চিকিৎসার যে কাগজপত্র অডিট কমিটির কাছে আসছে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সিনিয়র চিকিৎসকদের নিজেদের হাতে লেখা কোনও নোট নেই। বদলে সব পরামর্শই এসেছে ফোনে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে