—ফাইল চিত্র।
নতুন স্ট্যাটিউট বা বিধির কিছু সংযোজন নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। বিধিতে সেই সব ‘আপত্তিকর’ সংযোজনের প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন আবুটা। তাদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে অন্য শিক্ষক সংগঠন জুটা।
২০১৩ সালে সংশোধিত বিধি আচার্যের দফতরে পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিবই পদাধিকার বলে আচার্যের সচিব। সেই জন্য ওই বিধি তাঁর কাছেই পাঠানো হয়। সম্প্রতি কিছু সংযোজনের প্রস্তাব-সহ ওই বিধি ফেরত এসেছে যাদবপুরে। সংযোজনে বলা হয়েছে, শিক্ষক, আধিকারিক বা শিক্ষাকর্মীদের কেউ সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। তারই প্রতিবাদে সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠন আবুটা ও জুটা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, এই ধরনের বিধি সংযোজনের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। তাঁরা এর প্রতিবাদ করে কোনও সদুত্তর পাননি। এমনকী বিধিতে এমন সংযোজনের প্রস্তাব কে বা কারা দিয়েছেন, সেই বিষয়ে আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও কোনও রকম আলোকপাত করতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মী-আধিকারিকদের বক্তব্য, রাজভবন এবং উচ্চশিক্ষা দফতর ছাড়া আর কোথাও তো খসড়া বিধি যাওয়ার কথাই নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, আচার্য বা শিক্ষামন্ত্রী যদি সংযোজন সম্পর্কে অবহিত না-হন, তা হলে এই কাজ কার বা কাদের? ধোঁয়াশা বেড়়েছে বই কমেনি। তাই কর্মবিরতির পথ নিয়েছেন তাঁরা।
নয়া বিধিতে প্রস্তাবিত সংযোজন মানা হবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি (ইসি)-কে। আবুটার দাবি, কর্মসমিতির বৈঠকে ওই সব প্রস্তাবের বিরোধিতা করে হোক। কে বা কারা ওই সব প্রস্তাব এনেছেন, এখনও যে-হেতু সেটা স্পষ্ট নয়, তাই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের তরফে উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হোক। সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হোক, এমন প্রস্তাব কেউই আনেননি। সে-ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের পুরনো খসড়া বিধির ভিত্তিতেই নতুন বিধি তৈরি করা হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আবুটার দাবিকে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে জুটা জানিয়েছে, এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য মঙ্গলবারেই উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করবেন তাদের প্রতিনিধিরা। প্রয়োজনে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পড়ুয়া— সকলকে নিয়ে আন্দোলনের পথে নামবেন তাঁরা। আবুটার যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ বাম আমল থেকেই চলছে। তবে এখন যেন তা আরও নগ্ন ও প্রকট হয়ে উঠেছে। তাই কর্মবিরতি ছাড়া উপায় নেই আমাদের।’’
শিক্ষকদের কর্মবিরতি আন্দোলনে তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনই। যার ফল ভুগতে হবে পড়ুয়াদের। তা হলে বারবার এই পথ কেন বাছছেন শিক্ষকেরা?
‘‘রাজ্য সরকার যা শুরু করেছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনই বিপন্ন হয়ে উঠেছে। তার প্রতিবাদ করা আশু প্রয়োজন। মঙ্গলবারের কর্মবিরতি তো প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র,’’ বললেন আবুটার এক সদস্য।
এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পোশাকের শালীনতা নিয়ে মন্তব্য করে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নানা মহলে নিন্দার ঝড় উঠলেও এ দিন কোনও পক্ষের তরফেই প্রতিবাদ আন্দোলনের কথা জানা যায়নি। সুব্রতবাবুর মন্তব্যকে কার্যত আমলই দেননি পড়ুয়ারা।