ফাইল চিত্র।
চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে পুজোমণ্ডপে অসুররূপী ডাক্তারের মূর্তি সরানোর দাবিতে যাঁরা এককাট্টা হয়েছিলেন, সেই চিকিৎসকেরাই এ বার অভ্যন্তরীণ কলহে জড়িয়ে পড়লেন। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে তাঁরা প্রকাশ্যেই একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেছেন। প্রবীণদের অনেকেরই আশঙ্কা, বিভিন্ন ঘটনায় ডাক্তারদের উপরে সাধারণ মানুষের আস্থা এমনিতেই কমে গিয়েছে। তার উপরে তাঁরা নিজেরা বিবাদে জড়ালে জনমানসে ফের ভুল বার্তা যাবে।
আরও পড়ুন:ঋতব্রতের নামে এ বার দায়ের ধর্ষণের অভিযোগ
চিকিৎসক-নিগ্রহ রুখতে কিছু দিন আগেই তৈরি হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মত পেশ করে থাকেন এখানকার বহু সদস্যই। সেখানে বহু সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও প্রায়শই সরব হন অনেকে। কোনও কোনও বিষয়ে মতানৈক্য থাকলে সার্বিক ভাবে এককাট্টাই ছিলেন সদস্যেরা। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যের এক শিক্ষক-চিকিৎসককে নিয়ে একটি বিষয়ে মতামত জানাতে গিয়ে ফোরামের অনেক সদস্যই শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ।
স্বপন জানা নামে ওই শিক্ষক-চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘হাতুড়ে’ ডাক্তারদের মদত দিয়ে পাশ করা ডাক্তারদের অপমান করছেন। প্রবীণ ওই চিকিৎসকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কটূক্তি থেকে শুরু করে তাঁর কর্মস্থলে গিয়ে তাঁকে পিটিয়ে আসার হুমকি— কিছুই বাদ থাকেনি। চিকিৎসকদেরই আর একটি অংশ তার প্রতিবাদ করতেই শুরু হয় ধুন্ধুমার তরজা। যার জেরে ফোরাম এখন দ্বিধাবিভক্ত।
স্বপনবাবু অবশ্য এতে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘সরকার তো সমস্ত প্রত্যন্ত গ্রামে ডাক্তার পাঠাতে পারে না। আমি পাশ করা ডাক্তার হয়েও গ্রামে থাকা অশীতিপর বাবা-মাকে চিকিৎসা করতে পারি না। গ্রামীণ চিকিৎসকেরাই তাঁদের পাশে আছেন। তাই আমি বিভিন্ন গ্রামে এঁদেরই শিক্ষিত করে তুলতে চাই।’’
ডক্টরস ফোরাম-এর তরফে অর্জুন দাশগুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বপনবাবু যে ভাবে হাতুড়ে ডাক্তারদের হয়ে প্রচার করছেন, সেটা মানা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘ওই শিক্ষক-চিকিৎসক যে মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত, আমরা তার সুপার এবং অধ্যক্ষকেও চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছি।’’ সংগঠনের কর্তা রেজাউল করিমও বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত আক্রমণ সমর্থন করি না। কিন্তু হাতুড়েদের ডাক্তার বানানো এবং ডাক্তারদের ভিলেন বানানোর যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, দুটোই খুব ক্ষতিকর।’’
গ্রামে ‘হাতুড়ে’ ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাঁদের গুরুত্ব প্রচার করার কাজটা বেশ কয়েক বছর ধরেই করছেন স্বপনবাবু। সাম্প্রতিক ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে তাঁর এই প্রচার নিয়েই বিতর্ক শুরু। ফোরামের এক সদস্য এও লিখেছেন, ‘‘সবাই মিলে পেশেন্ট পার্টি সেজে গিয়ে লোকটিকে এক দিন ভাল করে পিটিয়ে এলে হয় না?’’ পরিস্থিতি দেখে এক প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসকের প্রশ্ন, ‘‘ডাক্তাররাই যদি ডাক্তারদের সম্পর্কে এই ভাষায় কথা বলেন, মানুষের সামনে তাঁদের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকবে?’’