প্লেটলেট গোনার পদ্ধতিতে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি

ডেঙ্গি নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সল্টলেকের এক বাসিন্দা। এক রাতে হাসপাতাল থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, রোগীর রক্তে প্লেটলেট ৫০ হাজারের নীচে নেমে গিয়েছে। তড়িঘড়ি সবাই ছুটলেন হাসপাতালে।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৭
Share:

ডেঙ্গি নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সল্টলেকের এক বাসিন্দা। এক রাতে হাসপাতাল থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, রোগীর রক্তে প্লেটলেট ৫০ হাজারের নীচে নেমে গিয়েছে। তড়িঘড়ি সবাই ছুটলেন হাসপাতালে।

Advertisement

আর একটি ঘটনায় পাড়ার প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে ছেলের প্লেটলেট পরীক্ষা করে ঘাবড়ে গেলেন তার বাবা। পরীক্ষায় দেখা গেল, রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা ৮০ হাজার! অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তড়িঘড়ি ছুটলেন ডাক্তারের কাছে।

তবে দু’টি ক্ষেত্রেই রোগীর কোনও ক্ষতি হয়নি। বরং পরের পরীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, প্লেটলেট অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু কোন ম্যাজিকে? চিকিৎসকেরা বলছেন, প্লেটলেট মাপার পদ্ধতিগত ফারাকেই তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি।

Advertisement

ওই দু’টি ক্ষেত্রেই প্রথম দফায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্লেটলেট মাপা হয়েছিল। তাতেই অনেক কম দেখিয়েছিল রক্তের প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা। দ্বিতীয় বার প্রথাগত পদ্ধতিতে মাইক্রোস্কোপের তলায় মাপতেই বদলে গিয়েছিল ফল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, চটজলদি ফল পেতে অনেক সময়ই ল্যাবরেটরিগুলি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্লেটলেট গোনে।

এন্ডোক্রিনোলজিল্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অস্থিমজ্জা থেকে তৈরি হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যাওয়ার সময় প্লেটলেটগুলি ঝাঁক বেঁধে থাকে (কখনও এক ঝাঁকে ৩-৪টি, কখনও বা ৮-১০টি)। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্লেটলেট গুনলে ওই যন্ত্র এক-একটা ঝাঁককে এক-একটা প্লেটলেট হিসেবে ধরে। তাতেই বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, পরে যখন রক্তের সব কোষের সঙ্গে আলাদা করে প্লেটলেট গোনা হচ্ছে, তখন ঝাঁকের প্রতিটি প্লেটলেটই গুনতিতে চলে আসে। সতীনাথবাবুর ব্যাখ্যা, প্রথাগত পদ্ধতিতে গোনার সময় দেখা যাচ্ছে ৪০ হাজার প্লেটলেট বেড়ে দেড় লক্ষ হয়ে যাচ্ছে। ‘‘সেটাই কিন্তু প্লেটলেটের আসল সংখ্যা,’’ বলছেন তিনি। সতীনাথবাবুর পরামর্শ, যাঁরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্লেটলেট মাপাচ্ছেন, তাঁদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে দ্বিতীয় বার প্রথাগত পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত দু’টি ঘটনাতেই প্রথমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্লেটলেট গোনা হয়েছিল। পরের বার প্রথাগত ভাবে। প্রথম রোগীকে প্লেটলেট মাপার পরের দিনই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় রোগীর ক্ষেত্রে কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি।

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বা যন্ত্রে মেপে পাওয়া প্লেটলেটের সংখ্যা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির রিপোর্টে লেখার কথা নয়। সব সময় প্রথাগত পদ্ধতিতে অর্থাৎ মাইক্রোস্কোপের নীচে রক্তের নমুনা থেকে প্লেটলেট গণনা করে সেই সংখ্যাই রিপোর্টে লেখা উচিত। যন্ত্রের গণনায় (মেশিন কাউন্ট) যে জোটবদ্ধ প্লেটলেট গোনা যায় না, তা ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের জানা উচিত। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গি রোগীর শরীরে প্লেটলেট ঠিক মতো যাচ্ছে কি না, তা জানার জন্য আমরাও মেশিন কাউন্ট করি। কিন্তু প্রথাগত ভাবে মাপার পরেই আমরা রিপোর্ট লিখি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement