Bangladesh Protests

বিক্ষোভে কংগ্রেস, সীমান্ত অবরোধের ডাক শুভেন্দুর

শুভেন্দুদের কর্মসূচির আগেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-নির্যাতন এবং বিভিন্ন হিংসার ঘটনার প্রতিবাদে এবং মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে বেকবাগানে জমায়েত করে ডেপুটি হাই-কমিশনের কাছে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলের কলকাতার চারটি সাংগঠনিক জেলার নেতা-কর্মীরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২০
Share:

বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের কাছে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ‘নির্যাতনে’র ঘটনার আঁচ আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে। বেকবাগানে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনের কাছে সোমবার ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস। তার পরে একই জায়গায় হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের ডাকে অভিযানে যোগ দিয়ে পড়শি দেশের হিন্দুদের প্রতি ‘আত্মীয়তা’র বার্তা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নানা ঘটনাকে ফের এক পঙ্‌ক্তিতে বসিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা প্রতিটি সীমান্তে ২৪ ডিসেম্বর প্রতীকী অবরোধের ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু। বাংলাদেশের ঘটনার নিন্দা করে বিজেপির ভূমিকা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। বাংলাদেশ-কাণ্ডে পথে নেমেছে সিপিএম ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও।

পড়শি দেশে দীপুচন্দ্র দাসকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ডাকে নিজাম প্যালেস থেকে বেকবাগানে ডেপুটি হাই-কমিশন অভিযানে সাধু-সন্তদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী নেতা, বিধানসভায় বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষেরা। বেকবাগানের মুখে পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকালে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শুভেন্দুরা। বিরোধী নেতা জানিয়েছেন, ২৬ তারিখ তিনি ফের ডেপুটি হাই-কমিশনে আসবেন। শুভেন্দুর বক্তব্য, “দীপুচন্দ্র-সহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের ঘটনায় ব্যবস্থা না-হলে এক কিলোগ্রাম পেঁয়াজও সীমান্ত পেরোবে না।” প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আগের দফার অশান্তির সময়েও দলের বিধায়কদের নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে অভিযান করেছিলেন শুভেন্দুরা।

শুভেন্দুদের এই কর্মসূচির আগেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-নির্যাতন এবং বিভিন্ন হিংসার ঘটনার প্রতিবাদে এবং মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে বেকবাগানে জমায়েত করে ডেপুটি হাই-কমিশনের কাছে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলের কলকাতার চারটি সাংগঠনিক জেলার নেতা-কর্মীরাও। বাংলাদেশের ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র যাতে সতর্ক ও সক্রিয় ভূমিকা নেয়, সেই দাবিও তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

অন্যান্য দল বিজেপির আগে পথে নেমে গেলেও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির তুলনাই বারবার টানছেন শুভেন্দু-সহ গেরুয়া শিবিরের নেতারা। বিরোধী নেতা যেমন এ দিন বলেছেন, “(মুর্শিদাবাদে) হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের সঙ্গে যা হয়েছিল, সেটাই ও-পারে দীপুর সঙ্গে হয়েছে। দুই সরকারে ফারাক নেই। আমরা বদলা নেবই, বদলা চাই! বাংলাদেশের হিন্দুরা আমাদের আত্মীয়। আত্মীয়দের পোড়ালে ঘরে বসে থাকা যায় না। হিন্দুরা জেগে গিয়েছেন।” পাশাপাশি শিলিগুড়ি, বালুরঘাট থেকে বলরামপুর, রানিগঞ্জ-সহ রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, বিজেপি প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের কাছে বিক্ষোভে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।

শুভেন্দুর মন্তব্যে গুরুত্ব দেয়নি তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বাংলাদেশের ঘটনার তীব্র নিন্দা করি আমরা। তৃণমূলের নীতি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে কেন্দ্রের পাশে থাকা। কিন্তু বিজেপি লোক দেখাতে কলকাতায় ডেপুটি হাই-কমিশনের দফতর অভিযান করছে কেন? বিজেপির এখানকার নেতারা কেন্দ্রকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলুন। কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা কেন ঢাকা যাচ্ছেন না বা কড়া বিবৃতি দিচ্ছেন না?”

বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত বলে কলকাতায় এসে মন্তব্য করেছিলেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। সেই প্রসঙ্গে বালুরঘাটে এ দিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘উনি (‌ভাগবত) আমাদের পূজনীয়। কিন্তু উনি ওঁর মত প্রকাশ করেছেন। ভারতে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে সকলেই স্বাধীন। তবে কেন্দ্রীয় সরকার চিন্তিত। কেন্দ্রীয় সরকার বিবৃতি জারি করে বলেছে, বাংলাদেশের যে ভাবে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মারা হচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।’’

প্রতিবাদে পথে নেমেছে সিপিএম-ও। দলের ডাকে মাথাভাঙা, পূর্বস্থলী-সহ নানা জায়গায় হয়েছে প্রতিবাদ মিছিল। যাদবপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিল এসএফআই। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে’র দাবি, “বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব এখানকার সংখ্যাগুরুর মৌলবাদকে শক্তিশালী করবে। সেটা যাতে না-হয়, ভারত-বাংলাদেশের সংহতির ইতিহাসকে জেতাতে রাজ্য জুড়ে পড়ুয়ারা লড়ছেন।”

শুরু হয়েছে নাগরিক প্রতিবাদও। বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় মৌলবাদী হিংসা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবিতে ‘নাস্তিক মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন ডেপুটি হাইকমিশনে দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরের কাছে চিঠি লিখেছে ‘আসানসোল চেম্বার অব কমার্স’। কালচিনিতে হয়েছে মশাল মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন