বাড়ি ফিরলেই মাছ-ভাত খাওয়াব, বললেন বৌদি

১৯৯৮ সালে কাটোয়া লোকসভায় মুখোমুখি লড়েছিলেন দু’জনে। এক জন কংগ্রেসের হয়ে, আর এক তৃণমূলের। শুক্রবার অবশ্য দুই নেতাকেই রেড রোডে শপথ নিতে দেখা গেল একসঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া ও কালনা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০২:২১
Share:

সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর শপথগ্রহণ দেখতে ভিড় করজ গ্রামের বাড়িতে।

১৯৯৮ সালে কাটোয়া লোকসভায় মুখোমুখি লড়েছিলেন দু’জনে। এক জন কংগ্রেসের হয়ে, আর এক তৃণমূলের। শুক্রবার অবশ্য দুই নেতাকেই রেড রোডে শপথ নিতে দেখা গেল একসঙ্গে।

Advertisement

প্রথম বার জিতেই মন্ত্রী। ঘরের ছেলের এই প্রাপ্তিতে খুশি ধরছে না কাটোয়ার করজ গ্রামের বাসিন্দাদের।

শুক্রবার সকাল থেকে মঙ্গলকোট বিধানসভা থেকে জয়ী প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর শপথগ্রহণ দেখবেন বলে টিভি খুলে বসেছিলেন গ্রামের মানুষ। চৌধুরীপাড়ার গুদামবাড়িতেও ততক্ষণে সাজ সাজ রব। টিভির সামনে বসে পড়েছেন মন্ত্রীর ভাই, ভাইপো,নাতি-সহ পাড়া-পড়শিরা। টিভিতে মুখ গুঁজে বসে না থাকলেও নাতি-নাতনিদের কাছ থেকে শুনে ছেলের শপথ গ্রহনের আনন্দে সামিল হলেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা আনোয়ারা চৌধুরী। তৃপ্তির সুর তাঁর গলায়। বললেন, ‘‘আজ ছেলের স্বপ্নপূরণ হল। অনেক হারের পরে এই জয় ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আমি খুবই আনন্দিত।’’

Advertisement

তাঁর পরিবার সূত্রেই জানা যায়, সপরিবারে কলকাতায় থাকলেও মাসে অন্তত দু’বার গ্রামে আসেন তিনি। ১৯৫০ সালে বাবা আবু তালেব চৌধুরীর তৈরী জামিয়া ইসলামিয়া আরবিয়া মাদ্রাসার দেখভালের সমস্ত দায়িত্ব নিজে হাতেই সামলান। প্রায় ৪০০ ছাত্রের প্রতিদিনের খাওয়া ও পড়াশোনার ভার তাঁর হাতে। এ বার অবশ্য দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। মন্ত্রী নিজেই বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘‘মঙ্গলকোটের মানুষের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আরও বেড়ে গেল।’’

এ দিন শপথ পাঠের আগে থেকেই বাজি নিয়ে প্রস্তুত ছিল গ্রামের খুদেরা। প্রবীণেরা জানালেন, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর পরিবারের রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত। ১৯৭১ সালে মন্ত্রীর বাবা আবু তালেব চৌধুরী লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ থেকে কংগ্রেসের সমর্থনে মুসলিম লিগের হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। এরপরে ১৯৭৬ সালে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এখনও তিনি ওই পদে রয়েছেন। কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে ১৯৮৪ সালে প্রথম ভোটে দাঁড়ান কাটোয়া কেন্দ্রে সিপিএমের সাইফুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ১৯৯৮ সালে ফের লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী মেহবুব জাইদির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ান। দু’বারের পরাজয় তাঁকে দমাতে পারেনি। ২০০৬ সালে আবার বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে পিডিসিআই-এর প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান। নন্দীগ্রাম আন্দোলনেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সে কথা জানিয়ে মঙ্গলকোটের এক সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “আমরা একসঙ্গে নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য আন্দোলন করেছি। লোকসভা ছাড়াও তিনি ডোমকল ও ভাঙরে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জেতার স্বাদ পেলেন মঙ্গলকোট থেকে।’’

এ বারে প্রায় ১১,৮৭৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি। সাত মেয়ের বাবা সিদ্দিকুল্লাকে নিয়ে গ্রামে খুশির মেজাজ। নতুন মন্ত্রীর বৌদি রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘‘ছেলেটা মাছ দিয়ে ভাত খেতে বড্ড ভালোবাসে। শপথ শেষ করে গ্রামে ফিরলে রান্না করে খাওয়াব। আশা করি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।’’

এ দিন পূর্বস্থলীর ধাত্রীগ্রাম, হেমায়েতপুরেও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের খুশি ছিল তোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো টিভিতে চোখ ছিল মানুষের। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ শপথ পাঠ শুরু করতেই হাততালিতে ফেটে পড়েন কর্মীরা। মিষ্টি খাওয়া, হাততালির ধুম পড়ে যায়। তবে কোন দফতর মিলবে, দাদা পূর্ণমন্ত্রী হবেন না তা নিয়ে কৌতুহল ছিল। শপথ শেষ হতেই পার্টি অফিসে ভেড়ে করে বসেন কর্মীরা। স্থানীয় নেতাদের কলকাতায় বারেবারে ফোন করে হাল হকিকত খোঁজ নিতেও দেখা যায়। হাটকালনা, বৈদ্যপুরে মিষ্টি বিলি করা হয়। স্বপনবাবু রাতে জেলায় ফিরছেন জেনে সংবর্ধনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কর্মীরা বলেন, ‘‘দাদা এ বার পূর্ণমন্ত্রী হবে ভেবেছিলাম। তা হননি ঠিকই, তবে বাড়তি একটা দফতর এসেছে।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘দাদা মন্ত্রী হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা কৃত়জ্ঞ।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন