জঙ্গিরা গরু পাচারে নেমেছে, মমতাকে নালিশ

পুলিশের একাংশের মদতেই এ বার জঙ্গিরা গরু পাচার শুরু করেছে বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালেন রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামান। গত শুক্রবার বিধানসভার অধিবেশন শেষ হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এই অভিযোগ জানান তিনি। আখরুজ্জামান রবিবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মন দিয়ে সব শুনেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৪:৩৫
Share:

পুলিশের একাংশের মদতেই এ বার জঙ্গিরা গরু পাচার শুরু করেছে বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালেন রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামান। গত শুক্রবার বিধানসভার অধিবেশন শেষ হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এই অভিযোগ জানান তিনি। আখরুজ্জামান রবিবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মন দিয়ে সব শুনেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’

Advertisement

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে যে মোকিমনগর মাদ্রাসার কথা উঠে এসেছিল, তা রঘুনাথগঞ্জের মধ্যে পড়ে এবং ওই বিস্ফোরণের ‘কিঙ্গ পিন’ রেজাউল করিমের বাড়িও ওই বিধানসভা এলাকায়। সে তথ্য মনে করিয়ে দিয়ে আখরুজ্জামানের পর্যবেক্ষণ, ‘‘জঙ্গিরা ফের সক্রিয় হচ্ছে। তারা টাকা সংগ্রহ করতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবাধ গরু পাচারে নেমেছে।’’

কী ভাবে পাচার চলছে, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি। বিধায়কের দাবি, অন্তত তিন মাস ধরে লরিতে করে বা কখনও হাঁটিয়ে শ’য়ে শ’য়ে গরু বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা সে কাজে মদত দিচ্ছেন বলে তাঁর দাবি। এ দিন তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘পাচারের টাকায় রাতের অন্ধকারে সীমান্তের এ পারে বস্তা ভর্তি অস্ত্র আসছে। সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলিতে অবৈধ ভাবে এসে বাংলাদেশিরা আশ্রয় নিচ্ছেন। অচেনা লোক দেখেও ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না!’’

Advertisement

এলাকার কংগ্রেস বিধায়কের এমন গুরুতর অভিযোগ উড়িয়ে দেননি সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস। তবে তাঁর দাবি, ‘‘এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। পাচার চলছে জেলার কিছু পুলিশ এবং বিএসএফের মদতে।’’ তিনিও মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

তা শুনে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল নেতারা পাচারে মদত দিচ্ছেন। পুলিশের নাকের ডগায় সেই পাচার চলছে। সেই দলেরই নেত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে অভিযোগ জানিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে কি!’’ তবে পাচারকে কেন্দ্র করে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে— তা মেনে নিয়েছেন সুতি ২ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসও।

পুলিশের মদতে গরু পাচারের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর। তিনি বলেন, ‘‘সুতি, জঙ্গিপুর সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারের কোনও খবরই নেই।’’

তবে এই এলাকায় সীমান্তে পাহারার দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফের যে ২০ নম্বর ব্যাটেলিয়ান, তার কম্যান্ডিং অফিসার রাজকুমার বাসাট্টাও মেনে নিয়েছেন, সম্প্রতি গরু পাচার বেড়েছে। তবে তাতে বিএসএফ জওয়ানদের জড়িত থাকার অভিযোগ মেনে নেননি তিনি। তিনি জানান, গত শুক্রবারই জঙ্গিপুর ব্যারাজের কাছে একটি লরি-সহ ১৯টি গরু ধরা হয়েছে। পাচার বেড়েছে, সে কথা একান্তে কবুল করেছেন সুতির এক পুলিশকর্মীও। তাঁর সাফ কথা, ‘‘চোখের সামনে দিনে-দুপুরে রাস্তা দিয়ে গরু যাচ্ছে। তা দেখেও আমরা ধৃতরাষ্ট্র হয়ে বসে রয়েছি।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যে নামলেই সুতি, জঙ্গিপুর লাগোয়া সীমান্তের একাংশ পাচারকারীদের দখলে চলে যায়। পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘গরু পাচার তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে চলে এসে অনেকে সুতি এবং জঙ্গিপুরের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। অবিলম্বে এই ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

তবে এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বাড়ার ব্যাপারে এসপি-র বক্তব্য, ‘‘এমন কোনও তথ্য নেই। এনআইএ এলাকার উপরে নজর রেখেছে।’’ ইমানিবাবুও দাবি করেন, ‘‘পাচারের সঙ্গে জঙ্গি তৎপরতা আছে বলে আমি মনে করি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন