Murshidabad Disturbance

অভিযোগ না করে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘রাজধর্ম’ পালনের পরামর্শ কংগ্রেসের ঈশার, অধীরের আবেদন, দুর্গত এলাকায় যান

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদে গোলমালের জন্য কংগ্রেস সাংসদ ঈশা খান চৌধুরীর ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। ফরাক্কা এবং শমসেরগঞ্জের যেসব এলাকায় গোলমাল হয়েছে, সেই এলাকা কংগ্রেস সাংসদের লোকসভা কেন্দ্র মালদহ দক্ষিণের অন্তর্ভুক্ত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৪৮
Share:

(বাঁ দিক থেকে) ঈশা খান চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদে গোলমালের জন্য কংগ্রেসকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। তিনি অবশ্য কারও নাম করেননি। কিন্তু বলেছেন, যেখানে গোলমাল হয়েছে, সেই এলাকা মুর্শিদাবাদ নয়, মালদহের মধ্যে পড়ে। সেটা কংগ্রেসের এলাকা।

Advertisement

ফরাক্কা এবং শমসেরগঞ্জের যে সমস্ত এলাকায় অশান্তি হয়েছে, তা কংগ্রেসের সাংসদ ঈশা খান চৌধুরীর লোকসভা কেন্দ্র মালদহ দক্ষিণের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, নাম না করলেও কংগ্রেসের সাংসদ ঈশার ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর ওই বক্তৃতার পরেই ঈশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গোলমালের ঘটনায় আমার বা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ভিত্তিহীন। কারণ, যে সমস্ত এলাকায় গোলমালের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলি সবই প্রশাসনিক ভাবে তৃণমূলের দখলে। বিধায়কেরা তৃণমূলের, পঞ্চায়েতও তৃণমূলের। সে ক্ষেত্রে আমি বা আমার দল কী ভাবে অভিযুক্ত হতে পারি?’’ কংগ্রেসের সাংসদের বরং পরামর্শ, ‘‘এখন এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল না তুলে রাজধর্ম পালন করুন! তাঁর পুলিশ-প্রশাসনকে সক্রিয় করুন। রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা বিভাগকে সক্রিয় করে আগে থেকেই এমন ঘটনা আটকানোর চেষ্টা করুন।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তৃতার পর পরই বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এক বার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া উচিত। অধীরের কথায়, ‘‘হাথরস, মণিপুরে গোলমাল হলে উনি খবর নেন। জঙ্গিপুর, শমসেরগঞ্জ কি অচ্ছুত? সেখানকার মানুষরা কি ভোট দেননি? মুর্শিদাবাদের সাংসদেরা কি ওঁর দলের নয়? তা হলে তাঁদের কেন মানুষের পাশে দেখা যাচ্ছে না? মুখ্যমন্ত্রী অন্তত এক বার ক্ষতিগ্রস্ত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হিন্দু এবং মুসলিম পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে কথা বলুন!’’

Advertisement

কংগ্রেসের সাংসদ ঈশা অশান্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই বিজেপিকে দায়ী করেছেন। বিজেপিকে আক্রমণ করে ঈশা বলেন, ‘‘বিজেপি ধর্মীয় রাজনীতি করতে সিদ্ধহস্ত। মুখ্যমন্ত্রী সেই দলের হাতে ধর্মীয় রাজনীতি করার তাস তুলে দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রথমে মালদহের মোথাবাড়ি এবং পরে শমসেরগঞ্জে এসে সাধারণ মানুষকে দা এবং হাঁসুয়া তুলে নেওয়ার নিদান দিয়ে হিংসাত্মক বক্তৃতা করেছেন। এই কঠিন সময়ে যাঁরা এমন ভাষণ দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ করুন। এটাই কংগ্রেসের দাবি।’’ কংগ্রেসের সাংসদের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস চায় না, দেশে আরএসএসের মস্তিষ্কপ্রসূত রাজনীতি জায়গা পাক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সৌজন্যে তারা ধর্মীয় রাজনীতি করার জায়গা পাচ্ছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ধর্মীয় রাজনীতির অভিঘাত নিয়ে ভাবতে অনুরোধ করছি। কারণ, আমি এলাকায় গিয়ে দুর্গত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সব ক্ষেত্রেই গরিব হিন্দু এবং গরিব মুসলমান ভাইয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’’

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যুও হয়েছে একাধিক। সংঘর্ষের জেরে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ছেড়ে নদীপথে মালদহের বৈষ্ণবনগরে অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। ঈশা জানান, তিনি সেই সব আশ্রয়শিবিরে ঘুরে এসেছেন। এলাকায় সম্পূর্ণ শান্তি না ফেরা পর্যন্ত মালদহের কোতুয়ালির বাড়িতে বসে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে চাইছেন মালদহ দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে অধীর শমসেরগঞ্জে গিয়ে দুর্গত মানুষের সঙ্গে দেখা করেছেন। গোষ্ঠীসংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিকও হতে শুরু করেছে এলাকা। শমসেরগঞ্জ ছাড়া সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবাও আবার চালু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement