ফাইল চিত্র।
দুই বিধায়ক শঙ্কর সিংহ এবং অরিন্দম ভট্টাচার্যের শাসক দলে যোগদানের সময়েই কংগ্রেসে আরও বড় ভাঙনের ইঙ্গিত দিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্করবাবু এবং শান্তিপুরের অরিন্দম বুধবার বিকেলে তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে এসে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিষেকের উপস্থিতিতে ‘হাত’ ছেড়ে জোড়া ফুলের পতাকা তুলে নেন। তার পরেই অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেস ৪৪ থেকে কমে ৩৬ হয়েছে। আরও বড় পদত্যাগ হতে চলেছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সমঝদারো কে লিয়ে ইশারা হি কাফি!’’ আর পার্থবাবুর কটাক্ষ, ‘‘মান্নানবাবুকে (বিরোধী দলনেতা) জিজ্ঞাসা করবেন তো, উনিও কবে এ দিকে আসবেন!’’
গত বছর বিধানসভা ভোটের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৮ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শঙ্কর-অরিন্দমের দলবদলের পরে আরও ৬-৭ জন কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে গুঞ্জন বেড়ে গিয়েছে। চর্চায় থাকা বিধায়কদের মধ্যে বেশ কয়েক জন এ দিনই বিধানসভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উপস্থিতিতে পরিষদীয় দলের বৈঠকে হাজির ছিলেন না। কে বা কারা আগামী দিনে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসবেন, তা নিয়ে অভিষেক বা পার্থবাবু কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, অধীরবাবুর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মুর্শিদাবাদের কয়েক জন বিধায়ক সম্ভাব্য ‘দলত্যাগী’র তালিকায় রয়েছেন। পুরুলিয়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কংগ্রেস বিধায়কদেরও তৃণমূলে আনার প্রয়াস চলছে।
আরও পড়ুন: চলুন খানিক হেঁটে আসি, লুচি-টুচি পরে হবে
দলবদলের ধাক্কায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের অন্দরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিধানসভায় এ দিনের বৈঠকে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান অবশ্য বলেছেন, পরিষদীয় দল বিধায়কদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়। প্রদেশ সভাপতিও ঘনঘন বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরেও কেউ ভয় বা প্রলোভনে অন্য দিকে গেলে দুর্ভাগ্যজনক।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, ৮ জন বিধায়ক দল ছাড়ার পরে আর ৬ জনকে শাসক দলে আনতে পারলেই কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি হারাবে এবং মান্নানও বিরোধী দলনেতার পদ হারাবেন। যদিও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলছে, দলত্যাগীরা কেউ পদত্যাগ করেননি এবং সকলের দাবি, তাঁরা কংগ্রেসেই আছেন! তা হলে আর খাতায়-কলমে কংগ্রেস স্বীকৃতি হারাবে কী ভাবে? অধীরবাবুও দাবি করেছেন, এ ভাবে কংগ্রেসকে শেষ করা যাবে না।
সরাসরি এ দিন শঙ্করবাবুরা অধীর বা কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যক্ত করেননি। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় তৃণমূল নেত্রীর লড়াইয়ে তাঁর পাশে থাকার এটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে হয়েছে আমার। সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে তাঁর সঙ্গে থেকে লড়াই করতেই তৃণমূলে যোগ দিলাম।’’ শঙ্কর-অরিন্দম বিধায়ক পদে ইস্তফা দেবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা কী করবেন, তা ওঁরাই ঠিক করবেন।’’ যদিও শঙ্কর বা অরিন্দমের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা ভোটে জিতিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’’ দুই বিধায়কের দলত্যাগকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে অধীরবাবুর মন্তব্য, ‘‘কায়েমি স্বার্থ, প্রোমোটিংয়ের জন্য কেউ কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেবী অন্নপূর্ণা বলতে পারেন! যে কর্মীরা প্রাণপাত করে ওঁদের ভোটে জিতিয়েছিলেন, যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হল।’’ একই কথা বলেছেন সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্যও।