পথে বাস কম, বেলা বাড়তে খুলল দোকান

রাস্তা আটকানো, বাস রুখে গোলমাল, মিছিল— বন্‌ধ সফল করতে সকাল থেকে নেমে পড়েছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সে সবে ভাটা। মঙ্গলবার বন্‌ধের তাই বিশেষ প্রভাব পড়ল না আসানসোল-দুর্গাপুরে। বাস কম চললেও অফিস-কাছারি, কল-কারখানা ছিল প্রায় স্বাভাবিক। বন্‌ধ পালনের জন্য জোর-জবরদস্তি করার অভিয়োগে আসানসোল ও কুলটিতে বেশ কিছু কংগ্রেস কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৮
Share:

বন্‌ধ সমর্থককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তা আটকানো, বাস রুখে গোলমাল, মিছিল— বন্‌ধ সফল করতে সকাল থেকে নেমে পড়েছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সে সবে ভাটা। মঙ্গলবার বন্‌ধের তাই বিশেষ প্রভাব পড়ল না আসানসোল-দুর্গাপুরে। বাস কম চললেও অফিস-কাছারি, কল-কারখানা ছিল প্রায় স্বাভাবিক। বন্‌ধ পালনের জন্য জোর-জবরদস্তি করার অভিয়োগে আসানসোল ও কুলটিতে বেশ কিছু কংগ্রেস কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ কংগ্রেসের একটি মিছিল আসানসোল পুরসভার সামনে গিয়ে হাজির হয়। জোর করে গেট আটকে রাখা হয়। ভিতরে যেতে বাধা দেওয়া হয় পুরসভার কর্মীদের। পুলিশ কংগ্রেস কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। পরে পুলিশের বড় বাহিনী পৌঁছলে বন্‌ধ সমর্থকেরা পিছু হঠে। তবে তার খানিক পরেই কংগ্রেসের একটি মিছিল জিটি রোড ধরে আসানসোল বাজারের দিকে যাওয়ার সময়ে একটি দূরপাল্লার বাস আটকে দেয়। জোর করে যাত্রীদের নামানোর চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে দেয়।
সকাল ১১টা নাগাদ রাহা লেনে অবরোধ শুরু করে কংগ্রেস। রীতিমতো যানজট হয়ে যায়। পুলিশ হঠিয়ে দিতে গেলে রাস্তায় শুয়ে পড়েন অবরোধকারীরা। পুলিশ জনা ৩৫ কংগ্রেস নেতা-কর্মীকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে। সকাল ৯টা নাগাদ কুলটির রানিতলায় গাড়ি আটকাচ্ছিলেন কিছু বন্‌ধ সমর্থক। পুলিশ গিয়ে তাঁদের সরে যেতে বললেও তাঁরা তা শোনেননি। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত করায় বেশ কিছু বন্‌ধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়।’’

Advertisement

আসানসোলে সকালের দিকে যানবাহন তেমন না চললেও বেলা বাড়ার পরে মিনিবাস রাস্তায় নামে। তবে দূরপাল্লার বড় বাস চলেনি। চিত্তরঞ্জন, রূপনারায়ণপুর, বারাবনি, ডিসেরগড়ে অন্য দিনের তুলনায় বাস কম চলেছে। আইএনটিইউসি-র পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘আসানসোলে হাতে গোনা কয়েকটি মিনিবাস ছাড়া আর কোথাও বাস বা মিনিবাস চলেনি। দূরপাল্লার বাস একেবারে বন্ধ ছিল।’’ যদিও তা মানতে চাননি আইএনটিটিইউসি-র পরিবহণ কর্মী সংগঠনের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সব রুটেই মিনিবাস স্বাভাবিক ভাবে চলেছে।’’

দুর্গাপুর থেকে এ দিন দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাস বন্ধ ছিল। বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান যাওয়ার বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। দুর্গাপুর স্টেশনের স্ট্যান্ডে প্রায় ৬৫টি ট্যাক্সি আছে। তার বেশির ভাগই রাস্তায় নামেনি। মিনিবাসও চলেছে সংখ্যায় কম। শহরের আইএনটিইউসি-র পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়ে রাস্তা বেরোননি। তাই বাস বা ট্যাক্সি না চললেও ভোগান্তি হয়নি।’’ পুলকার বন্ধ থাকায় স্কুলে যেতে পারেনি পড়ুয়ারা। সিটি সেন্টারের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল অর্ধেকেরও কম। পুলকার মালিকেরা জানান, রাস্তায় গোলমাল হলে পড়ুয়ারা বিপাকে পড়বে, এ কথা ভেবেই এ দিন গাড়ি বন্ধ রাখা হয়।

Advertisement

কল-কারখানায় অবশ্য হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো জানান, কারখানায় হাজিরা ছিল অন্য দিনের মতোই। রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর, লেনিন সরণি, বামুনাড়া ইত্যাদি শিল্পতালুকের বেসরকারি কারখানাগুলিতেও হাজিরা ও উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল বলে জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি অফিসেও হাজিরা ছিল অন্য দিনের মতোই। দুর্গাপুরে দোকানপাট, শপিংমল খোলা ছিল। আসানসোল বাজারে সকালে বন্ধ থাকলেও পরে অনেক দোকানপাট খোলে। বার্নপুরেও ছবিটা ছিল একই রকম। তবে বন্‌ধের তুলনামূলক ভাল প্রভাব দেখা গিয়েছে ডিসেরগড়ে।

সর্বাত্মক বন্‌ধ হয়েছে দাবি করে কংগ্রেসের আসানসোল মহকুমা সভাপতি রবিউল ইসলামের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ নামিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে অত্যাচার করেছে শাসকপক্ষ।’’ দুর্গাপুরের কংগ্রেস নেতা তথা দলের প্রদেশ সদস্য তরুণ রায়েরও বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় নেমে জোর করা হয়নি। মানুষজন নিজে থেকেই খুব কম বেরিয়েছেন।’’

তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষ বন্‌ধের বিরোধিতা করে কাজে গিয়েছেন। কংগ্রেস জোর করে তাঁদের বাধা দিয়েছে। পুলিশ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement