পুরবোর্ড দখলের পরে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে ঘিরে তৃণমূল কর্মীদের উল্লাস।
বিরোধী ভাঙিয়ে বোর্ড গঠন নিশ্চিত করে ফেলেছে তৃণমূল। তবু রেলশহরে হাল ছাড়ছে না কংগ্রেস।
আজ, বৃহস্পতিবার খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠন। বুধবার খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাছে গিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর শর্মিষ্ঠা সিংহ তৃণমূলে যোগদানের কথা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ফলে, তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা বেড়ে হল ১৮। তবে বিরোধীদের ধারণা, গোপন ব্যালটের ভোটাভুটিতে তৃণমূলের একাংশ কাউন্সিলর দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে। অন্য দিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রেফতারের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়ায় কংগ্রেসের ১১ জন কাউন্সিলরই ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারছেন।
খড়্গপুরে পুরভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছিল এ বার। কংগ্রেস এবং তৃণমূল দু’দলই ১১টি করে আসন পেয়েছিল। বামেদের ৬টি এবং বিজেপির দখলে ছিল ৭টি আসন। প্রথমে বাম-কংগ্রেস জোটের বোর্ড গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তারপরই শুরু হয় বিরোধী ভাঙানোর খেলা। অভিযোগ ওঠে, দুষ্কৃতীদের দিয়ে ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরদের ভাঙানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। সেই কাজে রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে। শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়ডু-সহ বিজেপির চার জন তৃণমূলে যোগ দেন। এরপরই শহরে একের পর এক কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার হয় প্রকাশ মান্না ওরফে হোন্দল নামে এক দুষ্কৃতী। আদালতের গোপন জবানবন্দিতে হোন্দল নাকি রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ তিন কংগ্রেস কাউন্সিলরের নাম নিয়েছিল। ফলে, মামলা জুড়ে যায় ওই তিন কংগ্রেস কাউন্সিলরের নামও। মিথ্যে মামলার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। বুধবার অবশ্য হাইকোর্ট তিন জনকেই আগাম জামিন দিয়েছে।
মঙ্গলবার বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী এবং সিপিআই কাউন্সিলর শেখ হানিফ তৃণমূলে যান। আর এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সিপিআইয়ের শর্মিষ্ঠা সিংহ। ফলে, তৃণমূল ম্যাজিক ফিগার ১৮-য় পৌঁছে গিয়েছে। অবশিষ্ট দুই বিজেপি কাউন্সিলর ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুখরাজ কৌর ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের অনুশ্রী বেহেরাকেও এ দিন ভাঙানার চেষ্টা চলেছে। তবে দু’জনের কেউই দলবদল করেনি। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের যে দু’জন কাউন্সিলর রয়েছেন তাঁরা শপথ গ্রহণে অনুষ্ঠানে যাবেন। তবে বোর্ড গঠনে যোগ দেবেন কি না সেটা আলোচনাস্তরে রয়েছে।’’ তুষারবাবুর সাফ কথা, ‘‘পুলিশ-দুষ্কৃতী দিয়ে তৃণমূল যে কাজ করল তাকে বিজেপি সমর্থন জানাবে না।”
অবরোধে ভোগান্তি মেদিনীপুরেও
তৃণমূল যে বোর্ড গঠনে মরিয়া হয়ে একের পর এক কাউন্সিলরকে ভাঙিয়েছে, তা স্পষ্ট। এ দিনও শর্মিষ্ঠার দলবদলের আগে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় তৃণমূল জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি, শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ও দলের পুরপ্রধান পদপ্রার্থী প্রদীপ সরকারকে। শর্মিষ্ঠা দলে যোগ দেওয়ার পরে অজিতবাবু বলেন, “পুরপ্রধান পদপ্রার্থী প্রদীপ সরকারের নেতৃত্বে আমরা বোর্ড গড়ব। সব মিলিয়ে ২৫ জন কাউন্সিলরের সমর্থন আমরা পাব। কংগ্রেস ভেঙে কাউন্সিলররা আমাদের ভোট দেবেন।”
কংগ্রেস অবশ্য এই সমীকরণেও হাল ছাড়ছে না। দলের ১১ জন কাউন্সিলরই এখনও পর্যন্ত সঙ্গে থাকায় কংগ্রেসের আশা আরও বেড়েছে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “আমরা ১১ জন কাউন্সিলরকে আমাদের কাছে রাখতে পেরেছি এটাই আমাদের সাফল্য। বোর্ড গঠনে লড়াই করব। আর লড়াই যখন হবে তা জয়ের লক্ষ্যেই হবে।” খড়্গপুরে শাসকদলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিন রাজ্য জুড়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি ছিল কংগ্রেসের। খড়্গপুরের ইন্দা, কৌশল্যা, বড়বাতি ও মালঞ্চ সেনচকে অবরোধ চলে। স্থানীয় কাউন্সিলর সৌমেন খানের নেতৃত্বে মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দিরের সামনেও সকাল সাড়ে দশটা থেকে আধ ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। কংগ্রেস কাউন্সিলর ভেঙ্কট রামনার বাড়িতে হামলার ঘটনায় এ দিন অবশ্য দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দুই সিপিআই কাউন্সিলর দলবদল করায় অস্বস্তিতে বাম শিবিরও। তবে এর জন্য তারা শাসকের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছে। সিপিআইয়ের জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, ‘‘পুলিশ-দুষ্কৃতী-তৃণমূলের অশুভ জোটই আমাদের কাউন্সিলরদের দলবদলে বাধ্য করেছে।’’ সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “ক্ষমতা দখল করতে তৃণমূল কতটা নীচে নামতে পারে তার নিদর্শন হয়ে থাকল খড়্গপুর পুরসভার ঘটনা। তবে সফল হতে পারবে না তৃণমূল। বোর্ড গঠনের ভোটাভুটিতে তৃণমূল দলটা ভেঙে যেতে পারে।”
আজ, বৃহস্পতিবার গোপন ব্যালটেই ভোট হবে। থাকবে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “বোর্ড গঠনের প্রস্তুতি সাড়া হয়েছে। চার জন ম্যাজিস্ট্রেটের দু’জন আমার সহযোগী হিসেবে থাকবেন। আর বাকিরা বাইরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তও জানান, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।