Bank Fraud

ব্যাঙ্ককর্মীরাই পাচার করছে তথ্য! ‘চেক ক্লোন’ করে উধাও গ্রাহকের ৬২ লাখ

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে। অনেক ব্যাঙ্কের অফিসারেরা এই ঘটনায় জড়িত। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নাম জানা গিয়েছে। সময় মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ২০:৪১
Share:

চেক ক্লোনিং-এর ঘটনায় ধৃত তিন। নিজস্ব চিত্র।

এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! চোর-ডাকাতদের ভয়ে আপনি ব্যাঙ্কের কাছে টাকা গচ্ছিত রাখছেন। আর সেই ব্যাঙ্কের একাংশের কর্মীরা নাকি আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য পাচার করে থেকে টাকা হাপিস করে দিচ্ছে। শুনতে আবাক লাগলেও, চেক জালিয়াতির তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

Advertisement

এই চক্রে একাধিক ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ জড়িত বলেও জানতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। এটিএম কার্ড ক্লোন-এর আতঙ্কে এমনিতে গ্রাহকদের মাথায় হাত। তার উপরে আবার চেকও হুবহু ‘ক্লোন’ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে গ্রাহকেরা টাকা রাখবে কোথায়? উঠছে প্রশ্ন।

সম্প্রতি অসমের একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের এক গ্রাহকের প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা আচমকা উধাও হয়ে যায়। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে ওই গ্রাহক অভিযোগ করেন, তিনি টাকা তোলেননি। তাহলে কে তুললেন টাকা? জানা যায়, ওই টাকা কলকাতার শ্যামবাজারের অন্য এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। শ্যামবাজারের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। উল্টোডাঙা থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তদন্তে নামে লালবাজারে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা।

Advertisement

হুগলির শিয়াখালার ওই একই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অন্য এক শাখার কর্মী সুমিত রায় এই ঘটনায় জড়িত বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সুমিত সেখানে বসেই অসমের ওই গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নেয়। এমনকি তাঁর চেকের তথ্যও বের করে নেন সুমিত। পরে সেই চেক ক্লোন করেন তাঁর দুই সহযোগী সুধীর বন্দোপাধ্যায় এবং শুভাশিস পাল। সেই চেক শ্যামবাজারের ওই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। যার অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলা হয়েছিল, তাকেও জেরা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মতুয়া মহাসঙ্ঘের বড়মা

কী ভাবে হচ্ছে চেক ক্লোন?

কোনও গ্রাহকের চেক হাতিয়ে নিয়ে প্রথমে তা ডিঅডারেন্টের বোতলের গায়ে শক্তকরে মুড়ে ফেলা হয়। এর পর রাসায়নিকের মাধ্যমে গ্রাহকের নাম এবং প্রয়োজনীয় ‘সিকিউরিটি কোড’ ধীরে ধীরে ব্লেড বা ধারালো কোনও কিছু দিয়ে তুলে দেওয়া হয়। পরে ওই জায়গায় বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে জালিয়াতরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম এবং প্রয়োজনীয় ‘সিকিউরিটি কোড’ বসিয়ে দেয়।

সেই চেক যেখানে জমা করা হচ্ছে, ওই ব্যাঙ্কে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখা হয়। যে ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা জমার পর, তাঁকে কমিশনও দেয় জালিয়াতরা। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ জটিল প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্ক কর্মীরা জড়িত না থাকলে, কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: নজরদার কমিটিতে সোশ্যাল মিডিয়ার বিশেষজ্ঞ

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে। অনেক ব্যাঙ্কের অফিসারেরা এই ঘটনায় জড়িত। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নাম জানা গিয়েছে। সময় মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অসমের ২৫ লক্ষ টাকার ঘটনা ছাড়াও এই চক্র আরও ৩৭ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া ওড়িশা, আশপাশের কয়েকটি রাজ্যতেও এই চক্র সক্রিয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন