হইহই করে অনেক জায়গায় এসে পড়েছে সে। আসব-আসব করছে পঠনপাঠনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। সেই ‘চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে শিক্ষাজগতে। শ্রেণিকক্ষে শেখানোর দায়িত্ব যাঁদের, আপত্তিটা আসছে মূলত সেই শিক্ষকদের দিক থেকে।
সিবিসিএস কী?
সিবিসিএস এমন একটি পাঠ-ব্যবস্থা, যেতে কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ইত্যাদি শাখা বিভাজনের গণ্ডি ছাপিয়ে যে-কেউ মূল বিষয়ের সঙ্গে পছন্দের অন্য যে-কোনও বিষয় পড়তে পারেন। সাহিত্যের সঙ্গী হতে পারে রসায়ন বা চারুকলা। গণিতের হাত ধরতে বাধা নেই সঙ্গীতের। পছন্দের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিষয়টি যদি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো না-হয়, একই সঙ্গে অন্যত্র তা পড়া যাবে। এই ব্যবস্থায় বার্ষিক পরীক্ষার বদলে মূল্যায়ন হয় সেমেস্টার পদ্ধতিতে। এবং কোনও বিষয়ে অকৃতকার্য হলে পরবর্তী সেমেস্টারে ক্লাস করার সঙ্গে সঙ্গে সর্বাধিক দু’টি বিষয়ে আবার পরীক্ষা দেওয়া যায়।
এর মধ্যেই সিবিসিএসের বিরোধিতা করল অধ্যাপক সংহতি মঞ্চ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে রবিবার এক সভায় বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকেরা জানালেন, সব বিষয় সম্পর্কে জানতে গিয়ে আদতে কোনও বিষয়েরই গভীরে যেতে পারবেন না পড়ুয়ারা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিবিসিএস চালু করার উপরে গুরুত্ব দিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ব্যবস্থা আংশিক ভাবে চালু হয়েছে। কলকাতায় এটি চালু হয়েছে স্নাতক বাণিজ্য শাখায়। কলা বিভাগে ২০১৯-’২০ শিক্ষাবর্ষে তা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু বিরোধিতা করছে অধ্যাপক সংহতি মঞ্চ। গত মাসের এক অনুষ্ঠানে পরিকাঠামো ঠিক না-করেই সিবিসিএসের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ।
আপত্তি কেন?
অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের সভাপতি তরুণ নস্করের মত, একসঙ্গে সব কিছু জানতে গিয়ে পড়ুয়ারা কোনও কিছুই পুরোপুরি জানতে পারবেন না। যেমন, রসায়নে অনার্স নিয়ে পড়তে গেলে আবশ্যিক সহযোগী বিষয় হিসেবে অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা থাকলেই ভাল। কিন্তু সেখানে ইতিহাস থাকলে পড়ুয়ার বিশেষ কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না। একই ভাবে ইতিহাস অনার্সের সঙ্গে রসায়ন নিলে লাভ কিছু হবে না। তাই কলা বিভাগের কোনও বিষয় থাকলেই ভাল হয়। মনে হতে পারে, বিজ্ঞান বিষয়ের সঙ্গে কলা বিভাগের কোনও বিষয় পড়লেই পড়ুয়া সমৃদ্ধ হবেন। তা কিন্তু নয়। এই ব্যবস্থার ফলে শিক্ষায় বিশৃঙ্খলাকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলেই অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের অভিমত।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়েই অবশ্য সিবিসিএসের পক্ষে। বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের স্বাধীনতা ও ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়ায় খুশি ছাত্রছাত্রীদের বিরাট অংশও।