লগ্নি মামলায় বিশেষ আদালত নিয়েই জট

সারদা থেকে আইকোর, তালিকাটি দীর্ঘ। সেই সব বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত মামলার বিচার পর্ব দ্রুত শেষ করতে কলকাতায় একটি বিশেষ আদালত গঠনের জন্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানিয়েছে সিবিআই।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৩
Share:

অসহায়: কলেজ স্ট্রিটে ম্যানহোল সাফাই করছেন এক কর্মী। নিজস্ব চিত্র

সারদা থেকে আইকোর, তালিকাটি দীর্ঘ। সেই সব বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত মামলার বিচার পর্ব দ্রুত শেষ করতে কলকাতায় একটি বিশেষ আদালত গঠনের জন্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানিয়েছে সিবিআই। কিন্তু বিশেষ আদালতের পরিকাঠামো-সহ নানান দিক নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে নবান্ন। তার জেরে লগ্নি মামলার বিচার শুরুর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা।

Advertisement

নবান্নের এক কর্তা অবশ্য জানান, সিবিআইয়ের অনুরোধে বিশেষ আদালত গঠন নিয়ে রাজ্য সরকারের মতামত চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিবিআই জবাব দিলে আদালত গড়ার প্রস্তাব বিবেচনা করবে রাজ্য। এই টানাপড়েনে বিশেষ আদালতের বিষয়টি নিয়েই জট পাকিয়ে গিয়েছে।

হাইকোর্ট ২০১৩-র ১৯ জুন অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্ত দল গঠন, কমিশন তৈরির পাশাপাশি বিশেষ আদালত গড়ে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায়ে বলেছিল, হাইকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে বিশেষ আদালতেই সারদা মামলার শুনানি পর্ব দ্রুত শেষ করতে হবে। তার পরেই বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন ও সিট গড়া হয়। কিন্তু কোনও বিশেষ আদালত তৈরি করা হয়নি। প্রায় চার বছর তদন্ত চালানোর পরে সিবিআই এ বার একে একে বড় লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চার্জশিট দিতে চলেছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে সারদা, রোজ ভ্যালি, আইকোর, এমপিএস, প্রয়াগের মতো লগ্নি সংস্থার তদন্ত গুটিয়ে আনার প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। সেই জন্যই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বিশেষ আদালত চাইছে সিবিআই।

Advertisement

এই বিষয়ে অগস্টে সিবি‌আইয়ের তরফে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল বলে সংস্থা সূত্রের খবর। প্রধান বিচারপতিও নবান্নকে সিবিআইয়ের প্রস্তাব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেন। দু’সপ্তাহ আগে এমপিএস মামলায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে হয়েছিল সিহিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা পঙ্কজকুমার শ্রীবাস্তবকে। তদন্ত ও বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য সে-দিনও মত প্রকাশ করেছিল আদালত। তার পরে সিবিআই ফের বিশেষ আদালত গঠনের জন্য কোমর কষে নেমেছে।

বিশেষ আদালত দরকার কেন?

তদন্তকারী সংস্থার দাবি, কলকাতায় একটি নির্দিষ্ট আদালতে সব লগ্নি মামলার শুনানি ও বিচার প্রক্রিয়া চালু হলে সিবিআই এবং অভিযুক্ত, দু’পক্ষেরই সুবিধা। সে-ক্ষেত্রে নিষ্পত্তিও হতে পারে দ্রুত। কারণ, সেখানে অন্য কোনও মামলার চাপ থাকবে না। সিট এই বিষয়ে ৫৩১টি মামলা রুজু করেছে। সিবিআই এ বছরেও নতুন করে ১২টি মামলার তদন্ত শুরু করেছে। এখনও অন্তত ১০০ মামলা বাকি। সেই জন্য কলকাতায় ‘আর্থিক অপরাধ-৪ শাখা’ তৈরি হয়েছে। ওই শাখার কাজ শুধু লগ্নি সংস্থার আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করা। যে-সব মামলার তদন্ত শেষ বা শেষের পথে, সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা উচিত বলে মনে করছে সিবিআই।

কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য সরকার না-চাইলে এমন বিশেষ আদালত গঠন সময়সাপেক্ষ। কারণ, কলকাতা হাইকোর্ট শুধু এক জন বিচারক ওই আদালতে বসিয়ে দেবে। বাকি পরিকাঠামো, লোকলস্কর দেওয়ার কাজ রাজ্য সরকারের। সেই জন্যই ওই সব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। তার সুরাহার আগে বিশেষ আদালত গঠনের জট কাটা মুশকিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন