আরএসএসের মতাদর্শে বিশ্বাসী বিবেকানন্দ বিদ্যাবিকাশ পরিষদ পরিচালিত তিনটি স্কুল নতুন করে অনুমোদন পেয়েছে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদন নিয়েছে স্কুলগুলি। তাতে আপত্তি করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। এ নিয়ে মোট ছ’টি আরএসএস প্রভাবিত স্কুল শিক্ষা দফতরের ছাড়পত্র পেল।
অতি সম্প্রতি যে তিনটি স্কুলকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার দু’টি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ এবং রায়গঞ্জে এবং একটি বীরভূমের সিউড়িতে। সিউড়ির স্কুলটি অনুমোদন পেয়েছে এ মাসেই। তিনটি স্কুলেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ভর্তিতে বাধা রইল না। সেখানকার ছাত্ররা পরের বছর থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিতে পারবে। পরিষদ সূত্রের খবর, আগে আরও তিনটি মাধ্যমিক স্কুল সরকারি অনুমোদন পেয়েছিল। সেগুলির একটি শিলিগুড়িতে, অন্য দু’টি মেদিনীপুরের যমুনাবালি এবং মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারে।
এ ছাড়া বাঁকুড়া, মালদহ, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-সহ বিভিন্ন জেলায় আরও গোটা দশেক স্কুলে এখন সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। সেগুলিও দশম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিদ্যাবিকাশ পরিষদ। তার মধ্যে চারটির অনুমোদন পাওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে দাবি করেছেন পরিষদ কর্তারা। এর পাশাপাশি, দক্ষিণবঙ্গে ২১৪টি এবং উত্তরবঙ্গে ১০০টি প্রাথমিক স্কুল চালায় আরএসএস প্রভাবিত ওই সংস্থা।
গত বছর মার্চ মাসে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে আরএসএস পরিচালিত স্কুলগুলির উদ্দেশে হুঙ্কার দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওই স্কুলগুলির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। আরএসএসের কোনও স্কুলকে নতুন করে আর সরকারি অনুমোদন দেওয়া হবে না।’’ কিন্তু তার পরেও আরও তিনটি স্কুলের অনুমোদন মেলায় প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষামন্ত্রীর পুরনো অবস্থান নিয়েই। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রী যে ধোঁকা দিয়েছিলেন, তা প্রমাণিত হল। তৃণমূলের সরকার থাকবে, অথচ, আরএসএস লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে না, তা হয় নাকি! তৃণমূল সরকারে আরএসএস-এর স্বার্থই যে সুরক্ষিত, তা ফের স্পষ্ট হল।’’ যদিও ছাড়পত্রের খবরে শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা পুরনো অনুমোদন বাতিল করেছি। নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হলে কে, কেন তা দিয়েছেন খোঁজ নেব। সত্যি সেগুলো আরএসএস পরিচালিত হলে অনুমোদন বাতিল হবে। ধর্মীয় বিভাজন যে স্কুল শেখায় তার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না।’’ বিদ্যা বিকাশ পরিষদের অবশ্য দাবি, যে সব স্কুলে তৃণমূল সরকার অনুমোদন দিয়েছে সেগুলি বাম জমানা থেকেই চলছে। সংস্থার সভাপতি গোপাল হালদারের আরও বক্তব্য, ‘‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমতি পেতে গেলে যে সব নিয়ম মানতে হয়, তা আমাদের স্কুলগুলি মানে। সেটা খতিয়ে দেখেই সরকার অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়েছে।’’ ‘‘আমরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করি। তা হলে সেটাও কি সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক’’- প্রশ্ন তুলেছেন গোপালবাবু।