চম্প্রমারি নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপে তৃণমূল, তদন্তের ইঙ্গিত

উইলসন চম্প্রমারিকে নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে তদন্তে নামার ইঙ্গিত দিল রাজ্য সরকার ও তৃণমূল। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, শাসক দলের বিধায়ক হওয়ার জন্যই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেও চম্প্রমারির বিরুদ্ধে প্রশাসন এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কংগ্রেসের দাবি, যে হেতু বিধায়কের নাম আন্তর্দেশীয় চন্দন কাঠ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে, তাই সিবিআই তদন্ত করানো হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ২২:০৯
Share:

উইলসন চম্প্রমারিকে নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে তদন্তে নামার ইঙ্গিত দিল রাজ্য সরকার ও তৃণমূল। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, শাসক দলের বিধায়ক হওয়ার জন্যই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেও চম্প্রমারির বিরুদ্ধে প্রশাসন এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কংগ্রেসের দাবি, যে হেতু বিধায়কের নাম আন্তর্দেশীয় চন্দন কাঠ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে, তাই সিবিআই তদন্ত করানো হোক। তবে তৃণমূলেরই একটি অংশ চম্প্রমারিকে কেন্দ্র করে বিতর্কের দায়ভার নিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, চম্প্রমারি নির্দল হিসেবে ভোটে জিতেছিলেন, তারপরে তিনি তৃণমূলে এসেছেন। বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, তৃণমূল এক সময়ে সাদরে তাঁকে দলে টেনে নিলেও এখন বিতর্ক থেকে বাঁচতে চম্প্রমারির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে।
চম্প্রমারির বক্তব্য, ‘‘এ সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমার সঙ্গে দলের সম্পর্ক ভালই। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’
আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ জুন জয়গাঁয় প্রশাসনের তরফে জবরদখলকারীদের হটানোর জন্য অভিযানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফোনে কাউকে চেঁচিয়ে হুমকি দেন উইলসন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এসডিও-বিডিএ অফিসের সকলকে জ্বালিয়ে দেব’। ওই ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী, এর পরে জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে অত্যন্ত কটূ মন্তব্য করে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করার হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায় চম্প্রমারিকে। গোড়ায় বিষয়টি জেলা স্তরে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের একটি মহল চাপ দেয়। কিন্তু নবান্নের কয়েকজন অফিসার বেঁকে বসায় জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠাতে বলে রাজ্য সরকার।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, উইলসনের বিরুদ্ধে রক্ত চন্দন–কাঠ পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগ শুনে এলাকার তৃণমূলের নেতাদের কয়েকজন এতটুকুও আশ্চর্য নন। নাম না প্রকাশের শর্তে তাঁরা অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে প্রথমবার চম্প্রমারি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নির্দল প্রার্থী হিসবে কালচিনি বিধানসভা উপনির্বাচন জেতার পরে এমন অভিযোগ ছিল না। পরে ২০১০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ওই ধরনের অভিযোগ এলাকায় কান পাতলে শোনা যেত। ২০১১ সালে ফের নির্দল হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন জেতার পরে ২০১২ সালে তৃণমূলের সহযোগী সদস্য হন উইলসন। তৃণমূলেরই কিছু স্থানীয় নেতার অভিযোগ, এর পরেই চন্দনকাঠ পাচার সক্রিয় হয়ে ওঠেন উইলসন ও তার পরিবারের সদস্যদের একাংশ।

দলের নেতাদের একাংশ জানান, শুধু আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্ব নয়, শিলিগুড়ির এক শীর্ষ নেতার কাছেও উইলসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পৌঁছেছিল। তিনিও উইলসনকে সতর্ক করেছিলেন। কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। প্রশাসনের উচিত অপরাধ আড়ালের চেষ্টা না করে প্রকৃত সত্য সামনে নিয়ে আসা।” আলিপুরদুয়ার জেলার কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “দক্ষিণ ভারত থেকে ডুয়ার্স হয়ে ভুটান, সেখান থেকে তিব্বতে চন্দন কাঠ যায়। খোদ শাসক দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে তাতে যুক্ত থাকার অভিযোগ। ফলে, এই তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়া উচিত। সে জন্য আমরা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

Advertisement

মোর্চা কিংবা আদিবাসী বিকাশ পরিষদও এখন উইলসনের পাশে দাঁড়াতে রাজি নয়। মোর্চার ডুয়ার্সের মুখপাত্র আনন্দ বিশ্বকর্মা বলেন, “দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের নামার বিষয় আমরা চিন্তা ভাবনা করব।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজু বারা বলেন, “বৃহস্পতিবার দলীয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হবে।’’

তবে উইলসন চম্প্রমারির বাবা সুবিনবাবু বলেন, “কী ভাবে আমাদের নাম চন্দন কাঠ পাচারের সঙ্গে জুড়ল বুঝতে পারছি না। সব অভিযোগ মিথ্যে। এর পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।”

এদিকে, বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গুণধর দাস অবিলম্বে বিধায়ক এবং জয়গাঁ উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে উইলসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে গোটা জেলা জুড়ে ওই দাবিতে সভা করবে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন