পাচারের হাত থেকে উদ্ধার নাবালিকা

এই আলাপের খবর জানতে পেরে রাবিয়ার পরিবার নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন সেই যুবকের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ে দিয়েও তাকে তাঁরা রক্ষা করতে পারেননি পাচারকারীদের হাত থেকে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৫
Share:

মানব পাচার, বিশেষ করে নাবালিকা পাচারে এ রাজ্য ফের শীর্ষে জানিয়ে বৃহস্পতিবারই সংসদে রিপোর্ট পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তার এক দিন আগেই শিয়ালদহ স্টেশনে পাচারকারীর খপ্পর থেকে বেঁচে ফিরল বছর ১৫-র নাবালিকা। বুধবার উদ্ধার করার পরে ওই নাবালিকাকে রাখা হয়েছে সল্টলেকের একটি সরকারি হোমে।

Advertisement

কলকাতা চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর থানা এলাকার বাসিন্দা বছর ১৫-র রাবিয়া (নাম পরিবর্তিত) মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সেই সময়েই তার সঙ্গে আলাপ হয় একই থানা এলাকার বাসিন্দা এক যুবকের। এই আলাপের খবর জানতে পেরে রাবিয়ার পরিবার নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন সেই যুবকের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ে দিয়েও তাকে তাঁরা রক্ষা করতে পারেননি পাচারকারীদের হাত থেকে।

বিয়ের কিছু মাস পরে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন রাবিয়ার বাবা। তখনই পাড়ায় এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয় রাবিয়ার। পরিচারিকা মা এবং দিনমজুর বাবা যখন বাড়িতে থাকতেন না, রাবিয়ার কাছে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন পাড়ার সেই মহিলা। অভিযোগ, এই যাতায়াত চলাকালীন রাবিয়া বাড়ি থেকে প্রায় ১১ হাজার টাকা নেয়। তা দিয়ে তাকে একটি মোবাইল ফোন এবং নতুন জামা-কাপড় কিনে দেন সেই পড়শি। সিম-সহ ফোন দেওয়ার পরদিনই রাবিয়াকে কলকাতায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বার করে আনেন ওই পড়শি। সঙ্গে ছিলেন জাকির হোসেন নামে এক যুবক এবং আরও এক ব্যক্তি। তাঁরা হাওড়ার বাসিন্দা বলেই জানা গিয়েছে। উদ্ধারের পরে রাবিয়া জানিয়েছে, শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছনোর পরে রাবিয়ার পড়শি মহিলা ও তাঁর সঙ্গীরা হঠাৎ কাউকে ফোন করেন এবং তার হাতে একটি কাগজ গুঁজে দিয়ে লোকজনের ভিড়ে মিশে যান। অভিযোগ, রাবিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই অন্য দু’-তিন জন এসে তার হাত ধরে নিয়ে যেতে চায়। এ বার বিপদ বুঝে রাবিয়া চেঁচামেচি জুড়ে দেয়। ভিড়ে ঠাসা স্টেশনের ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি মেয়েকে কয়েক জন যুবক টানাটানি করছে দেখে প্রথমে অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়েন। রাবিয়ার চেঁচামেচি শুনে শিয়ালদহ স্টেশনের ভিতরে থাকা কলকাতা চাইল্ড লাইনের কয়েক জন কর্মী দৌড়ে যান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রাবিয়াকে ফেলেই পালিয়ে যায় যুবকেরা। পরে ঘটনাস্থলে জিআরপি-কে ডেকে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা রাবিয়াকে উদ্ধার করে কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে হাজির করায়। বর্তমানে সে সল্টলেকের একটি সরকারি হোমে রয়েছে।

Advertisement

রাবিয়ার বয়ানের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে জিআরপি জানতে পেরেছে, ওই কিশোরীকে শিয়ালদহ থেকে হাওড়ায় যেতে চাইছিল ওই যুবকেরা। সেখান থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়াই পাচারকারীদের উদ্দেশ্য ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান. কিন্তু পড়শি যে মহিলার কথা রাবিয়া জানিয়েছে, তাকে ও দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত পুরো বিষয়টি জানা যাবে না বলেই মনে করছে রেলপুলিশ। চক্রের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে চাইল্ড লাইন ও রেলপুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন