Liquor

মদের অভাবে হাহুতাশ, সুফলেরও আশা

মদ-সঙ্কটে হাহুতাশ নিয়ে উপচে পড়ছে মিম, টিকটকের ঝাঁপিও।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৫:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রথমে ছিল ৩১ মার্চ। সেখান থেকে লকডাউনের মেয়াদ বেড়ে হয়েছে ১৪ এপ্রিল। তত দিন পর্যন্ত রাজ্যের সব মদের দোকানও বন্ধ। হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে পানরসিকদের মধ্যে।

Advertisement

মদ-সঙ্কটে হাহুতাশ নিয়ে উপচে পড়ছে মিম, টিকটকের ঝাঁপিও। বন্ধ মদের দোকানের সামনে সজল চোখে দাঁড়ানো যুবকের ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে হিন্দি গান, ‘মেরে হালাত অ্যায়সি হ্যায় কে ম্যায় কুছ নেহি কর সকতা।’ কোথাও দোকানে থরে থরে সাজানো মদের ছবির পিছনে বাজছে, ‘ইয়াদ আ রাহি হ্যায়, তেরি ইয়াদ আ রাহি হ্যায়!’

এক কাঠি সরেস কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে জানাচ্ছেন, অমুক জায়গায় অমুক দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মদের দোকান খোলা থাকবে। গুজব শুনে শহরতলির দু’জায়গায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল প্রায় সাড়ে ৮টা থেকে বন্ধ দোকানের সামনে লাইন পড়ে যায়। পুলিশ গিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় হতাশ ক্রেতাদের। চেনা-পরিচিত মদের দোকানের মালিকদের ফোন সারা দিন বেজে যাচ্ছে, ‘‘দাদা, কিছু একটা ব্যবস্থা করুন, প্লিজ়!’’

Advertisement

করোনা-আবহে মদের সঙ্কটে সুফলও দেখছেন চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেউ কেউ। শ্যামাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমরা এখন যে-সমস্যা নিয়ে চিন্তিত, তার পরিধি অনেক বড়। মদ্যপায়ীদের অসুবিধা নিয়ে ভাবার সময় কম। যাঁদের সমস্যা হবে, তাঁরা চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এই মওকায় মদ্যপান কমিয়ে দিলে বা ছেড়ে দিতে পারলে তো আরও ভাল।’’ অনেক চিকিৎসকের পরামর্শ, মদ দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে এই ক’টা দিন মদ না-ই বা খেলেন!

রাজ্যের আবগারি দফতর সূত্রের খবর, আপাতত মদের দোকান খোলার সম্ভাবনা নেই। এক কর্তা বলেন, ‘‘মদ তৈরিই তো বন্ধ। দোকানে দোকানে যা মজুত আছে, খুলে দিলে তা দু’দিনের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। তার পরে?’’

মদ তৈরির মূল উপাদান ‘র’ স্পিরিট মূলত আসে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্য থেকে। সেখান থেকে এই স্পিরিট জোগানের খবর নেই। রাজ্যের বটলিং প্ল্যান্টে মদ তৈরির জন্য যতটুকু ‘র’ স্পিরিট মজুত রয়েছে, তার সাহায্যে স্যানিটাইজ়ার তৈরি করা হচ্ছে।

আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ-পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা হিসেবে মদের দোকান খোলা হয়েছে শুধু কেরল ও রাজস্থানে। পশ্চিমবঙ্গে কোনও কারণে মদের দোকান খুললে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দোকান খুললেই বাড়ির বাইরে বেরোনোর উপরে নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে শত শত মানুষ। পরস্পরের মধ্যে এক মিটারের দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। উল্টে গন্ডগোল বেধে যাওয়ার আশঙ্কা ষোলো আনা। নিয়মিত মদ্যপায়ীদের একাংশের বক্তব্য, হোম ডেলিভারি চালু করলে ভাল হয়!

যাঁরা নিয়মিত মদ্যপানে অভ্যস্ত (বিশেষত বয়স্ক), ইতিমধ্যেই তাঁদের মানসিক সমস্যা শুরু হয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘আমাকে তিন জন ইতিমধ্যেই ফোন করেছেন। ওষুধ দিয়েছি। কিন্তু যে-সব দিনমজুর দৈনিক মদ্যপানে অভ্যস্ত, যাঁদের সচেতনতা তুলনায় কম, তাঁরা সমস্যায় পড়বেন।’’

মদ ছাড়ানোর কাজ করেন কে বিশ্বনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘যদি কালোবাজারি হয় বা বেআইনি ভাবে তৈরি মদ বাজারে আসতে শুরু করে, তা হলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। বিষমদ খেয়ে বিপদে পড়তে পারেন অনেকে। তা নিয়েও ভাবতে হবে সরকারকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন