প্রতীকী ছবি।
করোনার কালো ছায়া গাঢ় হচ্ছে বাংলাতেও। ওই করাল ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে তিন। আক্রান্তের সংখ্যাও ২২ থেকে বেড়ে ২৫ হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন কালিম্পংয়ের মহিলার (৪৪) অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। রবিবার গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এই প্রথম রাজ্যে কোনও মহিলা এই ভাইরাসের গ্রাসে প্রাণ হারালেন। মৃতার দেহ নিয়ে যেতে আপত্তি করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। কোন শ্মশানে দাহ হবে, তা নিয়েও শুরু হয় সমস্যা। জেলা প্রশাসন শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানে দাহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপত্তি তোলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। শেষে শহরের বাইরে সাহুডাঙি শ্মশানে দাহ করা হয়।
বঙ্গে মৃত তৃতীয় ব্যক্তি মাঝবয়সি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির লালারস পরীক্ষার জন্য হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। রিপোর্ট আসার আগেই সোমবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তাঁর ডুয়ার্স-যোগের খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে এ সম্পর্কে জানানো হয়নি।
এ দিন যে-তিন জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দাসপুরের ৩২ বছর বয়সি এক যুবক মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি আছেন। ওই মেডিক্যালে তাঁর নমুনা পরীক্ষায় করোনার ইঙ্গিত মেলে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেটি নাইসেডে পাঠানো হয়। নাইসেডের খবর, নিশ্চয়তার পরীক্ষাতেও যুবকের দেহে করোনা মিলেছে। মুম্বইয়ের সঙ্গে ওই যুবকের যোগ আছে। দ্বিতীয় আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তিনি সল্টলেকের এক নার্সিংহোমে ভর্তি আছেন। টালিগঞ্জের ৫২ বছর বয়সি এক বাসিন্দা রবিবার ঢাকুরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পেয়েছে এসএসকেএম।
রবিবার আক্রান্ত চার জনের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, আলিপুরের সেনা হাসপাতালে ভর্তি, আক্রান্ত চিকিৎসকের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ৩৪ জন কোয়রান্টিনে আছেন। ওই চিকিৎসকের কাছাকাছি এসেছিলেন আরও ৪৩ জন। মধ্যপ্রদেশ-যোগে লেক টাউনের নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন, বরাহনগরের বাসিন্দা ৬৬ বছরের বৃদ্ধকে এ দিন দত্তাবাদ সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে আরও এক আক্রান্ত, শোভাবাজারের ৭৭ বছরের বৃদ্ধ ভেন্টিলেটরে আছেন। জ্বর নিয়ে ২৪ মার্চ বহির্বিভাগে দেখাতে যান বড়বাজারের ওই কাপড়ের ব্যবসায়ী। ২৮ তারিখে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়। রবিবার নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে।
বরাহনগরের আক্রান্তের ভাই ১৩ মার্চ মধ্যপ্রদেশের বিলাসপুর থেকে জ্বর নিয়ে কলকাতায় ফিরেও পুরসভা বা পুলিশকে জানাননি বলে অভিযোগ। পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ওই ব্যক্তির নমুনায় করোনা পায়নি এসএসকেএম। তাই তাঁর বৃদ্ধ দাদার করোনা হল কী ভাবে, সেটা ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য দফতরকে। ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসা ৪৫ জনের উপরে নজর রেখেছে স্বাস্থ্য ভবন। বৃদ্ধের পরিজন মিলিয়ে ২৪ জন নজরদারিতে আছেন। জ্বর থাকায় তাঁদের তিন জনকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পঞ্চসায়রের ওই হাসপাতালে এগরা-যোগে করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধও ভেন্টিলেটরে আছেন। শেওড়াফুলির করোনা-আক্রান্ত, বেসরকারি সংস্থার কর্তা বড়জোড়া, দুর্গাপুর, মথুরাপুর, উত্তরপাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন। ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে দুর্গাপুর যাতায়াত করেছেন। তিনি ভেন্টিলেটরে আছেন। তাঁর সংস্পর্শে আসা ৪৩ জন আছেন নজরদারিতে।
নাইসেড সূত্রের খবর, আমলা-পুত্র, দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবা এবং হাবড়ার বাসিন্দা তৃতীয় আক্রান্তের তৃতীয় নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে। সব ঠিক থাকলে আমলা-পুত্র ও তৃতীয় আক্রান্তকে আজ, মঙ্গলবার ছেড়ে দিতে পারে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবার ছুটি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আইডি-র খবর, জ্বর আসায় তাঁকে এখনই ছাড়তে চান না চিকিৎসকেরা। ১৪ দিনের কোয়রান্টিন শেষ হওয়ায় এ দিন প্রথম আক্রান্ত অর্থাৎ আমলা-পুত্রের বাবা, মা, দুই পরিচারিকা এবং দুই গাড়িচালকের নমুনা ফের সংগ্রহ করা হয়েছে। ভাল আছেন তেহট্টের ন’মাসের শিশু-সহ পাঁচ আক্রান্ত। নীলরতন সরকার হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে থাকা এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই বনগাঁর ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাই তাঁর দেহ জীবাণুমুক্ত করে মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান এনআরএসের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)