প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণে আমপানের কারণে ইতিমধ্যে থমকে রয়েছে করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষার গতি। উত্তরে অতি ভারী ঘূর্ণিঝড়ের বিপর্যয় ঘটেনি ঠিকই। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোর জন্য যে তৎপরতার সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের নমুনা পরীক্ষা করা উচিত তা সম্ভব হচ্ছে না। যার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের একটি নোটিসে জানানো হয়েছে, আগামী সাত দিন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কালিম্পং থেকে প্রতিদিন পঞ্চাশটির বেশি যেন নমুনা না পাঠানো হয়। উত্তরবঙ্গের এক প্রশাসক-চিকিৎসক জানান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে যে সকল জেলার নমুনা পরীক্ষা হয় সেখানে প্রতিটি জেলায় প্রতিদিন গড়ে অন্তত পাঁচশো পরিযায়ী শ্রমিক নিজেদের ঘরে ফিরছেন। তাঁর প্রশ্ন, এই পরিসংখ্যানের নিরিখে ৫০টি নমুনা পরীক্ষা কি যথেষ্ট হতে পারে!
আচমকা এমন নির্দেশের প্রয়োজন হল কেন? উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো অন্তত পাঁচ হাজার নমুনা সেখানকার পরীক্ষাগারে পড়ে রয়েছে। অবস্থা এমনই যে রেফ্রিজারেটেরও আর নমুনা রাখার জায়গা নেই। শীতাতপ যন্ত্র চালিয়ে মেঝেয় নমুনা রাখায় ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে সে সব নমুনা কতখানি পরীক্ষার উপযোগী রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীর দেব জানিয়েছেন, বকেয়া নমুনার সংখ্যা পাঁচ হাজারের কমই। নমুনা রাখার স্থানাভাব যে ঘটছে তা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘কিছু করার নেই! পরিযায়ী শ্রমিকদের সকলের পরীক্ষা করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ‘জাতীয় বিপর্যয়’ তকমার চেয়ে অর্থই জরুরি, মত তৃণমূলের
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মতো বকেয়া নমুনার পাহাড় জমেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজেও। মালদহে ফিভার ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিনে রেখে যে ভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল সেটা অনেক ভাল ছিল। এখন নমুনার পাহাড় জমায় করোনা সন্দেহভাজনদের রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে।’’
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ পাল বলেন, ‘‘মালদহে আমাদের প্রচুর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসা বাকি রয়েছে। প্রতিদিন ৬০০-৭০০ শ্রমিক পরীক্ষার জন্য লাইন দিচ্ছেন। তার থেকে ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করতে বললে শুধু উপসর্গযুক্ত শ্রমিকদেরই বাছতে হবে।’’ তাতে তো সংক্রমণ ছড়াতে পারে? অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আমাদের আয়ত্তে নেই।’’ মালদহ কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতীক মুখোপাধ্যায় নমুনা বকেয়া থাকার কথা মেনে নিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন।
দক্ষিণবঙ্গে সরকারি ল্যাবের পাশাপাশি বেসরকারি ল্যাব থাকায় সমস্যা এত গভীর নয় বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। কিন্তু আমপানের ঘেরাটোপে থাকার পাশাপাশি কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনায় করোনার দাপট সবচেয়ে বেশি। যার প্রেক্ষিতে নজরদারি প্রক্রিয়া থেকে সংগৃহীত নমুনার পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের করোনা-পরীক্ষার চাপও সামলাতে হচ্ছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এক প্রশাসক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘খড়গপুর জংশনে প্রতিদিন মহারাষ্ট্র, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের নজরদারি প্রক্রিয়া এবং নমুনা পরীক্ষা, একসঙ্গে চালানো বাড়তি চাপ তৈরি করছে।’’ স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে আরটিপিসিআরের জন্য বিএসএল-২ পর্যায়ের ল্যাব তৈরির প্রস্তুতি চলছে।