Coronavirus in West Bengal

প্লাজ়মা দিতে চান করোনাজয়ী বৃদ্ধা

রোগ নিয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। কিন্তু রোগী কেন একঘরে হবেন? এ লড়াই করোনা-ভ্রান্তি দূর করারওকরোনা হওয়ায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে এসেছেন বিজয়া। এখন দিব্যি সুস্থ।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০৫:৪৯
Share:

রেডিয়ো হাতে করোনাজয়ী ‘দাই মা’ বিজয়া রায়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

ভোর পাঁচটায় উঠে পড়েছেন। হাসপাতাল থেকে পরে আসা সবুজ পাড় সাদা শাড়ি গরম জলে ধুয়ে মেলে দিয়েছেন। তার পরে উঠোনে বানানো বাঁশের মাচায় বসে রেডিয়ো সেটটাকে ভাল করে উল দিয়ে বাঁধছিলেন দাই-মা বিজয়া রায়। বয়স পঁচাত্তর। সাকিন ময়নাগুড়ির মেহেরি গ্রামে। জেলা জলপাইগুড়ি। এক গাল হেসে বলছিলেন, ‘‘স্ক্রু নেই তো, খোলসটা বারবার খুলে যায়। তাই বাঁধন দিলাম।’’

Advertisement

কিন্তু ভাঙা রেডিয়ো আবার কী দরকার পড়ল? সবে সপ্তাহখানেক আগে কোভিড হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়া বিজয়া বলেন, ‘‘বাহ, করোনার খবর শুনতে হবে না?’’ নিজে সবে সেরে উঠেছেন, তার পরে আবার করোনার খোঁজ কেন? তোবড়ানো গালে আবার আলো ছড়িয়ে পড়ল, ‘‘শুনছি নাকি প্লাজমা দিতে হয় চিকিৎসার জন্য। আমি তো অতশত জানি না। তবে রক্ত থেকে নেয় শুনেছি। আমি রক্ত দিতে চাই।’’

করোনা হওয়ায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে এসেছেন বিজয়া। এখন দিব্যি সুস্থ। হাসপাতালেই এক সময়ে আয়ার কাজ করতেন। এখনও সদ্যোজাতের দেখভালে তাঁর জুড়ি নেই। তাই এলাকায় তিনি দাই-মা বলেই পরিচিত। এক ডাকে সকলে চেনে। বললেই দেখিয়ে দেয় তাঁর বাড়ি। কিন্তু এখন যেন সেই দেখিয়ে দেওয়ার মধ্যে মিশে রয়েছে দ্বিধা। কারণ, করোনা। তিনি হাসপাতাল থেকে ছুটি পেতে চলেছেন শুনেই গ্রামের কিছু লোক বাড়ি বয়ে এসে শাসিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। বৃদ্ধার নাতনিকেও এলাকার একটি দোকানে যেতে বারণ করা হয়েছে বলে দাবি। তবে করোনা-জয়ী বিজয়া এই মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়তে চান। গ্রামে গিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চান। বৃদ্ধা বললেন, “আমাদের গ্রামে সকলের শুধু ভুল ধারণা। কারও সর্দি-জ্বর হলেই, বাইরে থেকে এসেছে শুনলেই একঘরে করে দিচ্ছে। চোদ্দো দিন পরে এই রেডিয়ো নিয়ে গ্রামে বের হব। খবর শুনিয়ে সকলকে বোঝাব।”

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা-পরীক্ষা, দেশে অভিন্ন রেট নির্ধারণের নির্দেশ

রক্ত দিতেও পিছ-পা নন বৃদ্ধা। শীর্ণ হাত তুলে বলছেন, ‘‘হাসপাতালে থাকতেই শুনেছি, যাঁরা সেরে উঠছেন, তাঁদের রক্ত নিয়ে নাকি চিকিৎসা হচ্ছে। হাসপাতালের দিদি-দের (নার্স) বলে এসেছি, আমার রক্ত যখন চাইবে, তখনই দেব। আরেক জন তো সুস্থ হোক।’’ চোদ্দো দিন পরে কাজেও ফিরবেন বলে ঠিক করেছেন। ময়নাগুড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক লাকি দেওয়ান বলেন, “বৃদ্ধার মনের জোর সাংঘাতিক। এই বয়সেও তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভয় পাননি, এটা সকলের শেখার।”

আরও পড়ুন: গুরুতর অবস্থা করোনায় আক্রান্ত দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর, দেশে সুস্থ দু’লক্ষের বেশি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন