Coronavirus in West Bengal

লোক মেলেনি, নিজেরাই নিজেদের লালারস সংগ্রহ করে ট্রপিক্যালে গেলেন কোয়রান্টিনে থাকা পিজিটিরা

করোনা পরীক্ষাকে ঘিরে বিভিন্ন হাসপাতালে অনিয়ম ও বিবেচনাহীন কাজকর্মের যে-অভিযোগ উঠছে, মেডিক্যালের এই ঘটনা তার নতুন প্রমাণ বলে মনে করছে স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশ।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১০
Share:

অসুখের গতি-প্রকৃতি বুঝতে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে রাজ্যে। ছবি: পিটিআই।

তাঁরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পিজিটি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি, জুনিয়র ডাক্তার। কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাসে থাকা ওই পিজিটিদেরই লালারস সংগ্রহের লোক পাওয়া যায়নি বৃহস্পতিবার। অগত্যা লালারস সংগ্রহের পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাঁরা নিজেরা পরস্পরের লালারস সংগ্রহ করেন। অভিযোগ, পরীক্ষার জন্য সেই নমুনা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে নিয়ে যেতেও রাজি হননি কেউ। বাধ্য হয়ে তাঁরাই তা ট্রপিক্যালে পৌঁছে দেন।

Advertisement

যদিও মেডিক্যাল-কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘কিছু’ পিজিটিকে পরস্পরের লালারস সংগ্রহ করতে হলেও সেগুলি তাঁদের ট্রপিক্যালে নিয়ে যেতে হয়নি। প্রথমে বেঁকে বসলেও পরে ট্রপিক্যালের এক মাইক্রোবায়োলজিস্ট সেগুলি নিয়ে যান। কর্তৃপক্ষ যা-ই বলুন, এই ঘটনায় তেতে উঠেছে মেডিক্যাল। করোনা পরীক্ষাকে ঘিরে বিভিন্ন হাসপাতালে অনিয়ম ও বিবেচনাহীন কাজকর্মের যে-অভিযোগ উঠছে, মেডিক্যালের এই ঘটনা তার নতুন প্রমাণ বলে মনে করছে স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশ।

দিন দুয়েক আগে মেডিক্যালে এক প্রসূতির করোনা ধরা পড়ার পরে তাঁর সংযোগে আসা পিজিটি-ইন্টার্নদের নিভৃতবাসে পাঠানো হয়। স্ত্রীরোগ বিভাগের ৩৬ জন পিজিটির লালারস ট্রপিক্যালে পাঠানোর কথা ছিল। তাঁদের মধ্যে এক পিজিটি বলেন, ‘‘দায়িত্বে থাকা মাইক্রোবায়োলজিস্ট জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে এত জনের নমুনা নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি সামনে থাকবেন, তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী আমরা যেন পরস্পরের লালারস সংগ্রহ করি। প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা করা যায় না এবং এতে যে রিপোর্টে ভুল আসার আশঙ্কা থাকে, তা জানালে তিনি বলেন, আমরা ডাক্তার। আমাদের নাকি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়! নিরুপায় হয়ে আমরা সেটা করি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ভয় কিসের? বেলগাছিয়া বস্তিতে করোনা-যুদ্ধে বলছেন ওঁরা

অন্য এক পিজিটি জানান, মাইক্রোবায়েলজিস্ট বা গ্রুপ ডি-র কর্মীরা সেই নমুনা ট্রপিক্যালে নিয়ে যেতে চাননি। মেডিক্যালের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, ‘‘এটা নিয়ে এত উত্তেজনার কিছু নেই। লালারস সংগ্রহ এমন কিছু বিশেষ কাজ নয় যে, পিজিটিরা পারবেন না। তাঁরা তো ডাক্তার। ঘটনাচক্রে কিছু পিজিটিকে পরস্পরের লালারস সংগ্রহ করতে হয়েছে। কারণ, ওঁরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিলেন। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আর এমনটা হবে না।’’ তিনি জানান, পিজিটিরা নমুনা ট্রপিক্যালে নিয়ে যাননি। প্রথমে একটু দোনামোনা করলেও পরে মাইক্রোবায়োলজিস্টই তা নিয়ে যান। তার পরে অধ্যক্ষার মন্তব্য, ‘‘যদি পিজিটিদের নিয়ে যেতেও হয়, তা হলেও সেটা খুব মারাত্মক কোনও ব্যাপার নয়।’’

ক্ষুব্ধ পিজিটিদের অভিযোগ, জরুরি বিভাগে মূলত তাঁরাই কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র এক জনকে পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুপমেন্ট (পিপিই) বা বর্মবস্ত্র দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কাছে উপসর্গযুক্ত রোগীদের পাঠানো হচ্ছে। বাকিরা শুধু গ্লাভস আর মাস্ক পরে রোগী দেখছেন। কিন্তু এমন অনেক রোগী আসেন, যাঁদের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে করোনার লক্ষণ থাকে না। ফলে পিজিটিদের অসম্ভব ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ডাক্তারদের সুরক্ষায় ‘ফেস শিল্ড’ দিলেন শল্য চিকিৎসক

হাসপাতাল সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রে ‘ইনভ্যালিড’ বা ‘ইন-অ্যাডিকোয়েট স্যাম্পেল’ বলে ট্রপিক্যাল থেকে রিপোর্ট আসছে। ফের নমুনা পাঠাতে হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, প্রশিক্ষণহীনদের দিয়ে লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। নতুন নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানোর ফলে রিপোর্ট আসার সময়সীমা দীর্ঘতর হচ্ছে।

মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের তৃণমূলপন্থী সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক শমিত মণ্ডল বলেন, ‘‘লালারস সংগ্রহ করার কথা আসলে মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা ইএনটি চিকিৎসকদের। কিন্তু অনেক জায়গায় পিপিই ছাড়াই প্রশিক্ষণহীন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের দিয়ে জোর করে এই কাজ করানো হচ্ছে। এতে রিপোর্ট ভুল বা ‘ইনভ্যালিড’ হতেই পারে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন