Coronavirus in West Bengal

করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর রেকর্ড অব্যাহত রাজ্যে

রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজ্যে ২৭৩৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:২৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

বঙ্গে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা বজায় রইল রবিবারও। ফের দুই মাপকঠিতেই শীর্ষে রইল পরিসংখ্যান। চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০০-র গণ্ডি ছাড়িয়েছে। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজ্যে ২৭৩৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। মৃতদের তালিকায় আছেন জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের কনস্টেবল দীপঙ্কর সরকার (৪৬)। প্রায় এক মাস বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে এ দিন তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের ৮ জনের মৃত্যু হল।

Advertisement

এ দিনের সংক্রমণ পরিসংখ্যানে কলকাতা (৭০৯), উত্তর ২৪ পরগনা (৫৮৬) এবং হাওড়া (২৪৫) প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে। উত্তরবঙ্গের যে চারটি জেলায় সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তা হল দার্জিলিং (১৫০), কোচবিহার (১৪৪), দক্ষিণ দিনাজপুর (১০২) এবং মালদহ (৯৯)। এ দিনের বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে মোট আক্রান্তের নিরিখে রোগীর মৃত্যুর হার হল ১.৭৮ শতাংশ। কলকাতায় মৃত্যুহার ২.৮২ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার ক্ষেত্রে সেই পরিসংখ্যান যথাক্রমে ২.৩৮ এবং ২.৮৫%। সুস্থতার হার এ দিন ৬৯.৮৩%। মোট নমুনা পরীক্ষার নিরিখে কেস পজ়িটিভিটির হার ১২.৯৯%। সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে বেড অকুপেন্সি ৩৭.৮৮%।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, বাংলায় সংক্রমণের গোড়াপত্তনের পর থেকে মৃত্যুর হার স্বাস্থ্য দফতরের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে কলকাতার পাশাপাশি জেলায় করোনা রোগীর চিকিৎসা পরিকাঠামো বৃদ্ধির উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। একই সঙ্গে পরিকল্পনা রূপায়ণে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা সরেজমিনে বোঝার জন্য পরিদর্শক দল গড়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিতে এ ধরনের তিনটি দল পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কয়েকটি পরিদর্শক দল প্রাথমিক ভাবে তাঁদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেমন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে বলে খবর।

স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলির তুলনায় সাগর দত্তে পিজিটি’র সংখ্যা খুব কম। এ ছাড়া সাগর দত্তে সব ক’টি সুপার স্পেশালিটি বিভাগ নেই। তাই কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যাতে আরও বেশি করে সেখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে যান, তা পরিদর্শক দল স্বাস্থ্য ভবনের নজরে এনেছে বলে খবর। পাশাপাশি, এইচডিইউ এবং অক্সিজেন বেডের সংখ্যা বৃদ্ধির পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, হাওড়ায় সরকারি অধিগৃহীত কোভিড হাসপাতালে এখনও হাই-ফ্লো ন্যাজ়াল ক্যানুলা (এইচএফএনসি) নেই বলে পরিদর্শক দলের নজরে এসেছে। ফুসফুসের রোগের পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হাই-রেজ়োলিউশন কমপুটেড টোমোগ্রাফি (এইচআরসিটি) যন্ত্রের মেয়াদও উত্তীর্ণ। একই সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের ‘সুপারিশে’র জন্য মৃদু উপসর্গযুক্ত আক্রান্তদের ওই কোভিড হাসপাতালে ১০ দিনের বেশি সময় হাসপাতালে রাখা হচ্ছে বলে জেনেছে পরিদর্শক দল। হাওড়ার একটি কোভিড হাসপাতাল লেভেল ৩ স্তরের হলেও সেখানে ল্যাব টেকনোলজিস্টের অভাবে পরীক্ষা হচ্ছে না বলে নজর করেছে পরিদর্শক দল।

কলকাতায় রুবি মোড়ের কাছে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালেও প্রভাব খাটিয়ে বেড আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। বস্তুত, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অ্যাডভাইজ়রি জারি করেছে স্বাস্থ্য কমিশন। বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে শয্যাসঙ্কট কাটাতে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক কোন রোগীকে ভর্তি করা সবচেয়ে জরুরি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে কমিশন। যার প্রেক্ষিতে সুপারিশ অগ্রাহ্য করার কথাও বলা হয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, শয্যা-সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে সরকার কতখানি মরিয়া তা এ ধরনের নির্দেশ থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে। আবার চিকিৎসকদের একাংশের যুক্তি, শয্যার অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে দায় যাতে না এড়ানো যায় নির্দেশিকার মাধ্যমে সেই বন্দোবস্ত করা হল। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য কমিশনের আরও একটি অ্যাডভাইজ়রি তাৎপর্যপূর্ণ। কমিশনের পর্যবেক্ষণ হল, একই ওষুধ বিভিন্ন দামে পাওয়া গেলেও বেসরকারি হাসপতালগুলির সবচেয়ে দামী ওষুধ দেওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। যার ফলে রোগীর পরিজনের উপরে আর্থিক চাপ এসে পড়ে। কমিশন অ্যাডভাইজ়রি জারি করে জানিয়েছে, কোন দামের ওষুধ কেনা হবে সে বিষয়ে রোগীর পরিজনদের মতামত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শাহের করোনা, রামমন্দিরের ভূমিপূজার কী হবে!

সংক্রমণের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং মৃত্যুর হার প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তথা কমিউনিটি মেডিসিনের প্রফেসর দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারের উচিত উপসর্গযুক্ত আক্রান্তেরা যাতে শয্যা পান তা নিশ্চিত করা। চল্লিশ শতাংশের কম বেড অকুপেন্সিতে শয্যার এত হাহাকার হওয়া উচিত নয়।’’

আরও পড়ুন: বুধবার বাড়ি গিয়েছিলেন অমিত, মোদী কি যাবেন নিভৃতবাসে?

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন