Coronavirus Lockdown

লকডাউন যৌক্তিক, কিন্তু ধাপে ধাপে তোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই এক দিন আগে লকডাউন শুরু হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০২:০৭
Share:

নিরুপায়: কাজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য বাসের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা। শনিবার বিকেলে, ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

লকডাউন বলবৎ রইল পঞ্চম দফাতেও। যদিও দেশ জুড়ে চার দফা লকডাউনের পরেও করোনার সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। ফলে লকডাউনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিভিন্ন মহলেই চলছে আলোচনা।

Advertisement

গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই এক দিন আগে লকডাউন শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল সংক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি করোনার চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরিও করা হবে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয় দফার লকডাউনে ২৭ এপ্রিল রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০৪। সেই সংখ্যা বেড়ে হাজার পেরিয়ে যায় দ্বিতীয় দফার লকডাউনেই। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র দু’সপ্তাহ। ২৭ মে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছুঁয়ে ফেলে। অর্থাৎ, এক মাসের মধ্যে এ রাজ্যে সংক্রমণের হার আট গুণ বেড়েছে। দিনের হিসেবে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা একশো থেকে দুশো হয়েছে ১৮ দিনের ব্যবধানে।

তা সত্ত্বেও করোনা নিয়ে গবেষণাকারীরা মানতে চাইছেন না যে লকডাউনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।

Advertisement

‘ন্যাশনাল সায়েন্স চেয়ার’ পার্থ মজুমদারের কথায়, ‘‘সংক্রমণ যাতে দ্রুত না ছড়িয়ে পড়ে লকডাউনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা গিয়েছে বলেই মনে হয়। চিকিৎসার পরিকাঠামো প্রস্তুতিও অনেকখানি সারা হয়ে গিয়েছে। লকডাউন দু’সপ্তাহ পরে উঠলেও সংক্রমণ বাড়বে। ফলে লকডাউন চালিয়ে কী লাভ হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। বরং অর্থনীতির উপরে চাপ পড়ছে। রেড জ়োনে লকডাউন বহাল রেখে বাকি জ়োনগুলিকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।’’

‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ভাইরোলজিস্ট তথা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আমিরুল ইসলাম মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘সারা দেশে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছয় থেকে সাত হাজারের ঘরে ওঠানামা করছে। এ রাজ্যে গত কয়েক দিনে আক্রান্তের সূচক দেড়শো থেকে দুশোর মধ্যে থাকলেও, বৃহস্পতিবার এক দিনে প্রায় সাড়ে তিনশোর ঘরে পৌঁছেছে।’’

তাঁর পর্যবেক্ষণ, লকডাউনে নানা ছাড়ের কারণে মানুষের মেলামেশা বাড়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। তার মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকেরাও রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চার দফার লকডাউনে অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম দফায় আরও ছাড় দিলে লকডাউনের কোনও অর্থ হয় না। সব কিছু না খুলে আমাদের রাজ্যে লকডাউন তোলার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করা উচিত।’’ তিনি জানান, পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের জেলায় ফিরে গেলে এবং পরিবহণ, দোকানপাট খোলার পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণ ক্রমাগত বেড়ে একটা সময়ে সমান্তরাল স্তরে থাকবে। আমাদের পরিভাষায় একে প্ল্যাটো বলে। সেই স্তরে পৌঁছনোর পরে সংক্রমণ কমতে থাকবে।’’ লকডাউন তোলার আগে আক্রান্তের হার নিম্নমুখী হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর ডিরেক্টর প্রোফেসর মধুমিতা দোবে জানান, লকডাউন উঠলে সংক্রমণ বাড়বে। সেই পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে এই রোগ সম্পর্কে জনমানসে যে ভীতি তৈরি হয়েছে তা ভাঙাটা জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘মোট জনসংখ্যার কত আক্রান্ত সেটা বুঝলে ভয়ের জায়গাটা অনেক কমে যায়।’’

এ ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, পরিস্থিতির নিরিখে প্রচারের ভাষাতেও বদল আনতে হবে।

কমিউনিটি মেডিসিনের প্রবীণ চিকিৎসক সমীর দাশগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘মানুষ হাসপাতালে গেলে যাতে চিকিৎসা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দীপাঞ্জন রায় বলেন, ‘‘যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সেখানে মানুষের ঘোরাফেরা চলবে না। যেখানে এক জন আক্রান্তও নেই, সেখানে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে সে সব জ়োনে সংক্রমণের হার কী রয়েছে তা নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যাচাই করা জরুরি।’’

গবেষকদের একাংশ মনে করেন, অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ধর্মীয় স্থান তার মধ্যে পড়ে না। গত কয়েক দিনে যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে ধর্মীয় স্থান খুলে দেওয়াটা ঠিক কাজ হয়নি। ধর্মাচরণের জন্য এক জায়গায় অনেকের জমায়েত হলে তাতে করোনার সংক্রমণ বাড়বে। অর্থনৈতিক সঙ্কটও কাটবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন