West Bengal News

ধার বাড়াতে দুর্নীতি দমনের মাথায় ডিজি

জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার এ বার সরাসরি রাজ্য পুলিশের ডিজি’র হাতে তুলে দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, তদন্তে গতি এনে দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়াকে আরও ধারালো করে তোলা।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০৪:৪৬
Share:

সুরজিত্ কর পুরকায়স্হ

জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার এ বার সরাসরি রাজ্য পুলিশের ডিজি’র হাতে তুলে দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, তদন্তে গতি এনে দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়াকে আরও ধারালো করে তোলা।

Advertisement

বর্তমানে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখাটি (অ্যান্টি করাপশন ব্যুরো, সংক্ষেপে এসিবি) রয়েছে স্বরাষ্ট্র কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার (হোম পার) দফতরের অধীনে। নতুন ব্যবস্থায় সেটি স্বরাষ্ট্র দফতরের আওতায় চলে আসবে। এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তার চাবিকাঠি থাকবে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের হাতে। দফতরের তরফে তিনিই মূলত নজরদারি চালাবেন। প্রশাসনের খবর: পঞ্চায়েত থেকে বিধায়ক-সাংসদ পর্যন্ত সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মী থেকে শীর্ষ স্তরের আমলাদের বিরুদ্ধে যে কোনও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে পারে ব্যুরো। নবান্নের সিদ্ধান্ত— অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে এখন ডিজি-ই ঠিক করবেন, এসিবি কোনটার তদন্ত করবে, আর কোনটা পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট থানায়।

আগামী ক’দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়ে যাবে বলে নবান্নের ইঙ্গিত। উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এখন হোম পার দফতর থেকে পাঠানো অভিযোগগুলির প্রাথমিক তদন্ত সেরে এসিবি রিপোর্ট দেয় দফতরকে। দফতর যে সব অভিযোগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, ব্যুরো সেগুলি নিয়ে বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা দাখিল করে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই ঘুরপথ এড়াতে চাইছেন। তাঁর ইচ্ছে, এসিবি’কে স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে এনে আরও ধারালো চেহারা দেওয়া হোক।

Advertisement

এবং সে কারণেই দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে সরাসরি ডিজি’কে আনার সিদ্ধান্ত। উপরন্তু নবান্ন-সূত্রের খবর, চার বছর আগে তৈরি হওয়া ব্যুরোর কাজকর্মেও মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ সন্তুষ্ট নন। কারণ হোম পারের অধীনে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার তদন্ত করা ছাড়া তাদের কার্যত কোনও ভূমিকা নেই।

এমতাবস্থায় পুলিশ প্রধান স্বয়ং শীর্ষে এলে ব্যুরো আরও কার্যকর হয়ে উঠবে বলে নবান্নের একাংশের ধারণা। তাদের পর্যবেক্ষণ, সাধারণত সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগই আসে এসিবি’তে। আর নিচুতলার কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নালিশ জমা পড়ে মূলত পুলিশে। দু’টির মাথায় যদি এক জনই (ডিজি) থাকেন, তা হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। প্রয়োজনে দ্রুত স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নেওয়াও সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, এসিবি’র বর্তমান প্রধান রামফল পওয়ারকে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি পদে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে নবান্ন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সরকারের আমলে পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বস্তুত গত বিধানসভা ভোটে ‘দুর্নীতি’কেই শাসকদলের বিরুদ্ধে মূল হাতিয়ার করেছিল কংগ্রেস-সিপিএম জোট। এ বার তাই ২১১ বিধায়কের শক্ত খুঁটির উপরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলনেত্রী গোড়া থেকে প্রশাসনে দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করার ডাক দিয়েছেন। ইমারতি সিন্ডিকেটের কোমর ভাঙতে সম্প্রতি তাঁর নির্দেশে সল্টলেকের এক দলীয় কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কথায়, ‘‘দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। নিচুতলা থেকে উপরতলা— দুর্নীতি করলে কেউ রেহাই পাবেন না। দুষ্টের দমন কী ভাবে করতে হয়, আমার তা জানা আছে।’’

প্রশ্ন উঠছে, সরকারি স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য ভিজিল্যান্স কমিশন রয়েছে। তা হলে এসিবি’র দরকার কী?

সরকারি সূত্রের দাবি, তদন্তে গতি আনার স্বার্থেই এটা প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে ভিজিল্যান্স কমিশন গড়া হয়েছিল ১৯৬৫-তে। তারা মূলত সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে হোম পারকে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে থাকে। ফৌজদারি ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দফতর থানায় এফআইআর করে। বিচারপর্ব শেষ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অন্য দিকে ১৯৮৮-র কেন্দ্রীয় দুর্নীতি দমন আইনবলে রাজ্যে এসিবি তৈরি হয়েছে ২০১২-য়। শাখাটি থানা হিসেবে কাজ করে। থানায় অভিযোগ এলে যে ভাবে এফআইআর করে তদন্ত হয়, এখানেও তা-ই। তা ছাড়া শুধু এসিবি’তে আসা অভিযোগের বিচারের জন্য বিশেষ আদালত রয়েছে। ফলে মামলার ফয়সালা হয় দ্রুত। ‘‘হোম পার থেকে অ্যান্টি করাপশন, ফের হোম পার— এত ফাইল চালাচালির ঝামেলা না-থাকলে পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক তাড়াতাড়ি হতে পারে।’’— আশা এক আধিকারিকের। তা সত্ত্বেও ভিজিল্যান্স কমিশন উঠিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তাঁরা বিশেষ দেখছেন না। ওঁদের মতে, ভিজিল্যান্স কমিশন একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। অতএব, এটিকে রাখতেই হবে।

তবে সব মিলিয়ে মমতা সরকারের পদক্ষেপে সদর্থক বার্তাই পাচ্ছে প্রশাসনের অন্দরমহল। কর্তাদের অনেকে বলছেন, তোলাবাজি, দুর্নীতি রুখতে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মীদেরও বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। যাঁরা গ্রাহ্য করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে এ বার ব্যবস্থা গ্রহণের রাস্তা তৈরি করছে পুলিশ-প্রশাসন।

আজ ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সর্বস্তরে দুর্নীতি বন্ধের কী বার্তা দেন, তা শোনারও অপেক্ষায় রয়েছে সব মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন