Education

Cost of education: নেই পুল কার, কমেছে স্কুল ফি-ও, পড়াশোনার খরচ চালাতে তবু নাভিশ্বাস মধ্যবিত্তের

স্কুল বন্ধ প্রায় দেড় বছর। এই দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার খরচ নেই। পুল-কারের ভাড়া নেই।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪০
Share:

ফাইল চিত্র

স্কুল বন্ধ প্রায় দেড় বছর। এই দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার খরচ নেই। পুল-কারের ভাড়া নেই। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে এই করোনা-কালে স্কুল ‘ফি’-ও গুনতে হচ্ছে কিছুটা কম। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও পড়াশোনার খরচ যেখানে পৌঁছেছে, তা সামাল দিতে হিমশিম সাধারণ মানুষ। একে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্ট ফোন আর মোবাইল রিচার্জের পিছনে গুনতে হচ্ছে মোটা টাকা। তার উপরে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে ফের স্কুল খোলার পরে ‘ফি’, পুল-কারের ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা।

Advertisement

সরকারি বাংলা মাধ্যম হোক বা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল— প্রায় সমস্ত স্কুলে স্মার্ট ফোন এখন লাগছেই। কারণ, গত দেড় বছর ধরে ক্লাস তো মূলত অনলাইনে। আবার সেই ফোন একেবারে সস্তা হলে মাঝেমধ্যেই ক্লাস চলাকালীন ভিডিয়ো থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা। অভিভাবকদের একাংশ বলছেন, ‘‘একটা ঠিকঠাক স্মার্ট ফোন কিনে দেওয়ার খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা।’’ যোধপুর পার্কের এক অভিভাবকের অভিযোগ, ঘরে বসে দেওয়া অনলাইন পরীক্ষায় নকল রুখতে অনেক সময়ে প্রয়োজন হচ্ছে দু’টি স্মার্ট ফোন। একটিতে পরীক্ষা, আর অন্যটির ক্যামেরা তাক করে রাখতে হচ্ছে এমন ভাবে, যাতে পরীক্ষার্থীকে পুরো দেখা যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্কুল তো বলেই খালাস। তবে কি দু’টি করে স্মার্ট ফোন কিনব আমরা?’’

এমন নয় যে, ক্লাস করতে পড়ুয়ার নিজের ফোন থাকা আবশ্যক। কিন্তু অনেকেরই বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করতে বেরিয়ে যান। অনেকে আবার ঘরে থাকলেও, তাঁর পক্ষে হয়তো সম্ভব হয় না ক্লাস চলাকালীন ফোন সন্তানের হাতে রেখে দেওয়া। তাতে তাঁর নিজের কাজ আটকে যায়। এমন হাজারো সমস্যার কারণে কষ্ট করেও ‘দামি’ স্মার্ট ফোন কিনতে হয়েছে
অনেক বাড়িতে। সঙ্গে রয়েছে ডেটা-র খরচ। ফলে, তা পেতে প্রতি মাসে মোটা টাকা গুনতে হচ্ছে মোবাইল রিচার্জের জন্য। না হলে নিতে হচ্ছে ব্রডব্যান্ড সংযোগ।

Advertisement

লকডাউনের সময় থেকে আবার কিছু অ্যাপ-নির্ভর কোচিং ক্লাসের রমরমাও শিক্ষার খরচ বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন প্রতীচী ইন্ডিয়া ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘এই কোচিং ক্লাসগুলি প্রথমে কম্পিউটার-কোডিং শেখানোর বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজারে নেমেছিল। এখন তারা সব বিষয়ই পড়াতে শুরু করেছে। বাজার ধরতে তাদের নানা ধরনের অফার রয়েছে। সেই সঙ্গে ঝুলিতে রয়েছে এমন বিজ্ঞাপন ও প্রচার, যাতে ওই কোচিং না করলে সন্তান পিছিয়ে পড়বে বলে অভিভাবকের মনে ভয় ধরে। তাঁরা বাধ্য হন সেই কোচিং-অ্যাপে সন্তানের নাম তুলতে। এই ই-টিউশনের খরচও কিন্তু অনেক।’’

তবে সাবিরের মতে, শিক্ষার ‘খরচ’ বৃদ্ধির সমস্যা মধ্যবিত্তের থেকেও নিম্ন-মধ্যবিত্তের বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল বন্ধ। তাই রান্না করা মিড-ডে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতে খাওয়ার খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ইন্টারনেট দুর্বল, সেখানে রমরম করে অফলাইন কোচিং ক্লাস চলছে। স্কুল খোলা থাকলে যারা কোনও কোচিং ক্লাসে যেত না, তারাও সেখানে যেতে বাধ্য হচ্ছে।’’ কারণ, স্কুল খোলা থাকলে যে ভাবে শিক্ষকদের ‘ধরে-কয়ে’ পড়া বুঝে নেওয়া যায়, কোভিডের এই সময়ে তা কষ্টকল্পনা।

হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রদীপ বসুর মতে, ‘‘শিক্ষার খরচ যে ভাবে বেড়েছে, তাতে শিক্ষাকে যাঁরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘কিনতে পারছেন’, তাঁরা টিকে থাকছেন। যাঁরা পারছেন না, তাঁরা হারিয়ে যাচ্ছেন। যেমন, লকডাউনে অনেক পড়ুয়াকে পড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিতে হয়েছে। সবার কি আর প্রতি মাসে স্মার্ট ফোন রিচার্জ করার ক্ষমতা রয়েছে?’’ শিক্ষাবিদ সমীর ব্রহ্মচারীর কথায়, ‘‘শিক্ষার দ্রুত বাড়তে থাকা খরচ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার। শুধু স্কুল স্তরেই নয়, উচ্চ শিক্ষাতেও খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে তা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।’’

তবে করোনা হানা দেওয়ার বহু আগে থেকেই চড়চড়িয়ে বাড়ছিল শিক্ষার খরচ। বিশেষত শহরাঞ্চলে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সেখানকার বেসরকারি ইংরেজ মাধ্যমের স্কুল কিংবা বেসরকারি কলেজে। কোভিড-কাল বাদ দিলে, স্কুলের ‘ফি’ বেড়েছে প্রায় প্রতি বছর। স্কুল থেকে বই কেনা বাধ্যতামূলক হলে (বিশেষত দিল্লি বোর্ডের), তার দরও বেড়েছে অন্তত ১০-১৫ শতাংশ। কলম থেকে রিফিল, জ্যামিতির বাক্স থেকে ফোল্ডার—দাম বাড়ছে অধিকাংশ সরঞ্জামেরই। আর কেউ যদি প্রায় প্রতি বিষয়ের জন্য যায় বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে, কিংবা ভর্তি হয় কোচিং সেন্টারে, তা হলে তো কথাই নেই। শুরুতেই মোটা টাকা তুলে রাখতে হবে অভিভাবককে। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েকে ভাল স্কুলে ভাল ভাবে পড়াশোনা করানোর খরচ বেশ কয়েক বছর ধরেই চলে যাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে ভর্তির যা খরচ, সঙ্গে যে বিপুল অঙ্কের ‘ফি’, তাতে সবার পক্ষে ওই টাকা দেওয়া কঠিন।’’

ভয়ের ভ্রুকুটি ভবিষ্যতের আশঙ্কাতেও। লকডাউনে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অনেকের বেতন কমেছে। অনেকে রোজগারে কার্যত একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। অথচ বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত, খোলার পরে ‘ফি’ বৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারে বিভিন্ন স্কুল। একই কথা প্রযোজ্য পুল-কার সমেত আরও বিভিন্ন খরচের ক্ষেত্রে। এই খরচ সামাল দিতে না পারার আশঙ্কায় অনেকে ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে ভর্তি করছেন সরকারি স্কুলে। অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘স্কুল খুললে বেতন কত বাড়বে, জানি না। পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ায় স্কুল-গাড়ির খরচ বৃদ্ধিও প্রায় নিশ্চিত। সঙ্গে বইপত্র, খাতার খরচ বেড়ে যাওয়া তো আছেই। সত্যিই নাভিশ্বাস উঠছে আমাদের।’’
(শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement