পালিয়েছে পাত্রী, ‘দুঃসময়ে’ দীপঙ্করকে বিয়ে করলেন অনিন্দিতাই

এত দিনে বিয়েতে রাজি হলেন। মাত্র দশ দিনের নোটিসে সোদপুরের দীপঙ্কর দে-র পাশে দাঁড়ালেন অনিন্দিতা। সোদপুর ব্রিজের গায়ে বিয়েবাড়ি।

Advertisement

স্যমন্তক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০৪:৫১
Share:

দীপঙ্কর ও অনিন্দিতা। ছবি: শৌভিক দে

টুয়েলভ পাশের পরে তাঁর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন জ্যাঠামশাই। তখন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন খানাকুলের অনিন্দিতা পাল।

Advertisement

এত দিনে বিয়েতে রাজি হলেন। মাত্র দশ দিনের নোটিসে সোদপুরের দীপঙ্কর দে-র পাশে দাঁড়ালেন অনিন্দিতা। সোদপুর ব্রিজের গায়ে বিয়েবাড়ি। সিংহাসনের পাশে প্লাস্টিকের চেয়ারে অনিন্দিতা। গায়েহলুদের অপেক্ষায়। মেঝেতে আসন পেতে আচার পালন করছেন বৃদ্ধ বাবা। জানলার ধারে মা।

মায়ের কথা ভেবেই এত দিন বিয়ে করেননি অনিন্দিতা। ইংরেজিতে স্নাতক হয়ে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মায়ের ক্যানসার ধরা পড়ল। চাকরি নিয়ে কলকাতায় উঠলেন। শুরু হল লড়াই। চিকিৎসা আর অভাবের। মা এখন ভালই। অনিন্দিতা চাকরি করছেন ব্যাঙ্কে। তবে রোজগারের বেশিটাই মায়ের চিকিৎসায় চলে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: সঙ্গে চাই শাড়ি, পানু শ্বশুরবাড়ি

এ দিকে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল সোদপুরের ছেলে, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্মী দীপঙ্কর দে-র। সপ্তাহ দুয়েক আগে জানতে পারেন, পাত্রী বাড়ি ছেড়েছেন। তখনই দীপঙ্করের মায়ের মনে পড়ে যায়, বছর দুয়েক আগে একটি ‘ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে’ অনিন্দিতার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।

অনিন্দিতা বলেন, ‘‘২০১৬-র শেষে ওখানে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। কিন্তু মায়ের শরীর খারাপ হওয়ায় বিয়ের ভাবনা বাতিল করি। দীপঙ্করের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। দু-একদিন কথাও। তবে বিয়ের কথা এগোয়নি।’’

ইতিমধ্যেই বিয়েবাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন দীপঙ্কর। বললেন, ‘‘দিন দশেক আগে মা ফোন করেছিলেন অনিন্দিতাকে। ও বলে, আপত্তি নেই। দুঃসময়ে সঙ্গী হতে চায়। কিন্তু এখনই টাকা জোগাড় করতে পারবে না।’’ দীপঙ্করের মা যোগাযোগ করেন সোদপুরের মহিলা পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা তুলে ফেলেন সংগঠনের জনা চল্লিশ সদস্য। তাঁদের ভাড়া করা বাড়িতেই সোমবার সকালে এসেছেন অনিন্দিতা এবং তাঁর বাবা-মা। সংস্থার সদস্যা লিজা গুহ বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, দীপঙ্করদের পাশে থাকব। এখন মনে হচ্ছে, অনিন্দিতার মতো সাহসী মেয়ে আমারই পরিবারের সদস্য।’’

আর তাঁর অফিসের মেয়েটির কথা শুনে বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, ‘‘সব সময় মহিলাদের স্বাবলম্বনের কথা ভেবেছি। আমারই দফতরে যে এমন সাহসী কর্মী আছেন, জানতামই না! শুভ কামনা রইল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন