মুকুল রায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের বিধায়কপদ খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রথমে ঠিক ছিল, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সচিবালয়। কিন্তু আইনি পরামর্শের পর ঠিক হয়েছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আর কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘যেহেতু ওই মামলার পার্টি ছিলেন মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায়, তাই এই সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হতে হবে। বিধানসভা আর এ ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করবে না।’’ কলকাতা হাইকোর্ট ১৩ নভেম্বর ২০২৫-এ মুকুল রায়ের বিধায়কপদটি খারিজ করে দেয়। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শাব্বর রশিদি এই রায়দান করেন।
এই রায়টি দলত্যাগ বিরোধী আইনানুযায়ী করা হয়েছে বলে দাবি বিজেপি পরিষদীয় দলের। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন মুকুল। ২ মে জয়ী হওয়ার পর ১১ জুন তিনি পুনরায় তৃণমূলে যোগ দেন। এর পরই তাঁর বিধায়কপদ খারিজের দাবি তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু স্পিকারের কাছে আবেদন জানান, দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুসারে মুকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ফল না পেয়ে মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু। প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। কিন্তু শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, এই মামলার নিষ্পত্তি কলকাতা হাই কোর্টেই করতে হবে। এর পর শুভেন্দু কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মুকুল পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান পদে কেন থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পৃথক মামলা করেছিলেন বিজেপির কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। দু’টি মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির বেঞ্চে। ১৩ নভেম্বর আদালত রায় ঘোষণা করে। বলা হয়, দলত্যাগ বিরোধী আইনে খারিজ করা হচ্ছে মুকুলের বিধায়কপদ।
বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, আদালতের রায়ের পর বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নিয়েছিলেন স্পিকার বিমান। এমনকি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছিল তাঁর। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে এই বিষয়ে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত হয়, বিধানসভার সচিবালয় এই সংক্রান্ত বিষয়ে আর উচ্চ আদালতে আবেদন করবে না। যেহেতু মুকুল-পুত্র এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাই তিনিই পিতার বিধায়কপদ খারিজ মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
উল্লেখ্য, শুধু মুকুল নন, ২০২১ সালে নির্বাচিত আরও কয়েক জন বিজেপি বিধায়ক দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেন। সুমন কাঞ্জিলাল, তন্ময় ঘোষ, হরকালী প্রতিহার ও তাপসী মণ্ডলের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের পর তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে পদ খারিজের আবেদন ইতিমধ্যেই স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল। সেই আবেদনগুলিও এখনও নিষ্পত্তিহীন।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল ২০২১ সালে প্রথম বার কোনও নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন। তবে তার পর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পর বিধানসভার কোনও অধিবেশনে যোগদান করেননি তিনি। আর গত কয়েক বছর ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসপাতালে, তা-ও আবার অচৈতন্য অবস্থায়। তাই বিধায়কপদ নিয়ে তাঁর আর কোনও উৎসাহ নেই বলেই জানাচ্ছেন তাঁর একদা অনুগামীরা।