মধুস্মিতার বাবা দিলীপবাবু ও মা অর্চনাদেবী। ফাইল চিত্র
মেয়ের অঙ্গ যাঁদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, তাঁদের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে যেন শোকের ছায়া ঘিরেছে বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মী দিলীপ বায়েন এবং তাঁর স্ত্রী অর্চনাদেবীকে।
দম্পতির ১৩ বছরের মেয়ে মধুস্মিতা মস্তিষ্কের জটিল রোগে ভুগছিল। ১৭ নভেম্বর দুর্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তার ‘ব্রেন ডেথ’-এর ব্যাপারে নিশ্চিত হন। সহকর্মী ও ডাক্তারদের প্রস্তাবে মেয়ের অঙ্গদানে সম্মত হন দিলীপবাবুরা। ‘গ্রিন করিডর’ করে ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে ১৭২ কিলোমিটার উজিয়ে মধুস্মিতার দু’টি কিডনি ও লিভার পৌঁছয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। রাতেই শুরু হয় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ।
২৩ নভেম্বর মৃত্যু হয় একটি কিডনির গ্রহীতা অভিষেক মিশ্রের। অন্য কিডনিটি পেয়েছিলেন মিঠুন দালাল (২৩)। সোমবার এসএসকেএমে মৃত্যু হয়েছে তাঁরও। মঙ্গলবার ফোনে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, মেয়েটা আরও পাঁচ জনের মধ্যে বেঁচে থাকবে। একটু একটু করে সে ভাবনাতে ঘা লাগছে।’’
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এ বছর বেশ কয়েক বার অঙ্গ প্রতিস্থাপন হলেও অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পরিকাঠামো উন্নত না হওয়ায় প্রত্যাশিত ফল মিলছে না। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর পরিবর্তন না হলে গ্রহীতাদের বাঁচানো কঠিন।
তবে দিলীপবাবু বিশ্বাস করেন, দিন বদলাবে। কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন মেজিয়ায়। এখন ছুটি নিয়ে গিয়েছেন তাঁর ‘দেশের বাড়ি’ অসমের বরপেটা জেলার কলবাড়ি গ্রামে। ফোনে জানালেন, ফিরবেন ডিসেম্বরে। বললেন, ‘‘যখনই অঙ্গদান সংক্রান্ত কিছু করার সুযোগ আসবে, আমরা স্বামী-স্ত্রী সেখানে যেতে রাজি আছি। অঙ্গ-প্রতিস্থাপনের পরের চিকিৎসায় পরিকাঠামোর খামতি থাকলে সেটা খুঁজে বার করে পূরণ করা দরকার। তা হলে অন্যের শরীরে হলেও বেঁচে থাকবে মধুস্মিতারা।’’