তাকে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় সে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত বলে তাকে হেফাজতে পেয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কিন্তু ভারতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র মাথা সেই সাজিদ ওরফে মাসুদ রানাকে ফের নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদালত ১৪ দিনের জন্য সাজিদকে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
খাগড়াগড় তদন্তের সঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের সে অর্থে সম্পর্ক নেই। তা হলে সাজিদকে হেফাজতে পেতে বারাসতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তারা মঙ্গলবার আর্জি জানাল কেন?
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, বাগুইআটি থানায় অক্টোবরে রুজু হওয়া গাড়ি চুরির একটি মামলায় সাজিদের নাম উঠে এসেছিল। সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই সাজিদকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুধু কি তা-ই? বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সন্ত্রাস দমন শাখার ডেপুটি কমিশনার রণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বাংলাদেশের নাগরিক সাজিদ ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে নিজেকে এ দেশের নাগরিক প্রতিপন্ন করেছিল। আমরা ওই বিষয়টি তদন্ত করছি।”
কিন্তু পুলিশ অফিসারদেরই একটি অংশের বক্তব্য, সাজিদ বাংলাদেশে বহু অপরাধে অভিযুক্ত। সেখানকার দেশের পুলিশ ও গোয়েন্দারা তাকে বহু দিন ধরেই খুঁজছিলেন। খাগড়াগড় সূত্রে হদিস পাওয়া জঙ্গি গোষ্ঠীতে সাজিদের ভূমিকা জানার পর তার হদিস পেতে এনআইএ ১০ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিল। বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ তাকে ৮ নভেম্বর গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, কলকাতা বিমানবন্দরের কাছ থেকে তাকে ধরা হয়েছে। তবে পুলিশের একটি সূত্রের খবর, সাজিদকে ধরা হয় ফরাক্কা থেকে।
সাজিদকে এনআইএ নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরেই ১০ নভেম্বর সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে একটি রহস্যজনক বিস্ফোরণ হয়। সাজিদকে কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করানো হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর সাজিদকে নিয়ে এনআইএ-র তদন্তকারীরা মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে যান। কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে করে বহরমপুর পৌঁছনোর পর সিআরপি এবং বিএসএফের নিরাপত্তায় সাজিদকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়।
সেই সাজিদকে নিছক গাড়ি চুরি ও বিদেশি নাগরিক আইনের মামলায় হেফাজতে নিতে বিধাননগর কমিশনারেটের উদ্যোগী হওয়াটা খুব স্বাভাবিক বলে পুলিশের অনেকেরই মনে হচ্ছে না। এক পুলিশকর্তার কথায়, “সাজিদের মতো আসামির নিরাপত্তা সব সময়েই ঝুঁকি ও দুশ্চিন্তার বিষয়। তার পরেও তুলনায় সাদামাঠা মামলায় সাজিদকে হেফাজতে নিতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া সোজা বিষয় নয় বলেই মনে হচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র একটি সূত্রের খবর, বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ আসলে বাবুভাই নামে এক সন্দেহভাজন বাংলাদেশি জঙ্গির ব্যাপারে সাজিদের কাছ থেকে বিশদে জানতে চায়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাবুভাই ভারতীয় জাল নোটের কারবারে
জড়িত এবং ভারতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গিদের অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে তার বড় ভূমিকা রয়েছে। ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর দু’-এক জনকে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ইতিমধ্যেই আটক করেছে। পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সাজিদকে দিয়ে তাদের শনাক্ত করাতে চান গোয়েন্দারা।