রূপান্তরকামীদের জন্য দ্বার মুক্ত যুব সিপিএমে

রাজনীতির মূল স্রোতে রূপান্তরকামীদের ঠাঁই দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ বলে সিপিএম সূত্রের বক্তব্য। কোনও রাজনৈতিক দলের একটি ইউনিট কমিটিতে ১১ জনের মধ্যে ৯ জন রূপান্তরকামী— এমন ঘটনা এ দেশে প্রথম ঘটল বলেও সিপিএম সূত্রের দাবি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share:

বছরকয়েক আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এলজিবিটি প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে ইউনিট কমিটিতে রূপান্তরকামীদের জন্য দরজা খুলে দিল তাদেরই যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। রাজনীতির মূল স্রোতে রূপান্তরকামীদের ঠাঁই দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ বলে সিপিএম সূত্রের বক্তব্য। কোনও রাজনৈতিক দলের একটি ইউনিট কমিটিতে ১১ জনের মধ্যে ৯ জন রূপান্তরকামী— এমন ঘটনা এ দেশে প্রথম ঘটল বলেও সিপিএম সূত্রের দাবি।

Advertisement

সব ধরনের সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছতে চেয়ে রূপান্তরকামীদের জায়গা দেওয়ার কাজ করেছে কেরলের ডিওয়াইএফআই। কোচিতে সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রূপান্তরকামী-সহ সব ধরনের প্রান্তিক মানুষকে সংগঠনে সামিল করতে হবে। সেই মোতাবেকই তিরুঅনন্তপুরমের পিএমজি ইউনিট কমিটি ৯ জন রূপান্তরকামীকে স্থান দিয়েছে। দক্ষিণী ওই রাজ্যে সংগঠনের সদস্যপদের ফর্‌ম-এ তৃতীয় লিঙ্গের জন্য জায়গাও রাখা হচ্ছে। যুব সিপিএমের ইউনিট কমিটিতে জায়গা পেয়ে শিল্পী তথা কেরল রাজ্য রূপান্তরকামী পর্ষদের সদস্য সূর্য অভিলাষ বলেছেন, এই পদক্ষেপ তাঁদের মতো আরও মানুষকে সক্রিয় রাজনীতির প্রতি উৎসাহিত করবে।

আরও পড়ুন: ‘জেহাদে’র বাংলায় ভাগবত, কেরলে শাহ

Advertisement

সিপিএমের কোনও সংগঠনের সর্বভারতীয় সিদ্ধান্ত মানে তা যে কোনও রাজ্যেই কার্যকর হবে। তার মানে কি বাংলাতেও এই পদক্ষেপ দেখা যাবে? সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং রাজ্যে যুব ফ্রন্টের দায়িত্বে থাকা মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে রূপান্তরকামীদের মধ্যে থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহ দেখালে এখানেও নিশ্চয়ই হবে। কেরল, তামিলনাড়ু বা অন্ধ্রের মতো রাজ্যগুলিতে বাম রাজনীতির সঙ্গে ওঁদের যোগাযোগ বেশি। তাই কেরল আগে এটা করতে পেরেছে।’’ বাংলায় ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্রের যুক্তিও একই রকম। তাঁর সংযোজন, ‘‘বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের জমানায় সব ধরনের সংখ্যালঘুর উপরে যে ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাবনা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিস্থিতিতে কেরল ইউনিটের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং যুগান্তকারী। আমাদের রাজ্যে রূপান্তরকামীদের সামাজিক অধিকারের দাবিকে আমরা সমর্থন করেছি। চেতলায় এক রূপান্তরকামীকে আক্রমণের ঘটনার প্রতিবাদে নেমেছি। সুযোগমতো সংগঠনেও তাঁদের নেওয়া হবে।’’

তবে রূপান্তরকামীদের আলাদা করে বেশি চিহ্নিত করতে গেলে মূল উদ্দেশ্য অধরা রয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন সমাজের বিশিষ্টেরা। যুব সিপিএমের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও যেমন সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘মূলস্রোতে আনার নাম করে এদের যেন আলাদা বিভাগে রাখা না হয়। আর সকলের সঙ্গে যদি রাখা যায়, তা হলেই উদ্যোগ সফল হবে। সংগঠনের অন্য কেউ যাতে এঁদের পথের অন্তরায় না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি।’’ লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়েরও মত, ‘‘রূপান্তরকামীদের মধ্যে অনেক সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী মানুষ আছেন। ভাবনাচিন্তায় তাঁরা তো আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা নন। কাজেই সংগঠনে আলাদা করে রাখলে তাঁদের আরও পৃথক হিসাবে দেখিয়ে দেওয়া হবে বলে মনে হয়।’’

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, আলাদা করে তাঁদের জন্য ইউনিট হচ্ছে না। ঘটনাচক্রে একটা ইউনিটেই ৯ জন রূপান্তরকামী এসেছেন। এ বার যোগাযোগ ঘটবে অন্যত্রও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন