ভোটে কৌটো নেড়ে সর্বহারা পথে সিপিএম

এক কালের ‘সর্বহারার পার্টি’ তাই ফের কৌটো হাতে ভোটারদের দোরে-দোরে যাচ্ছে। খাতায়-কলমে অবশ্য তারা চিরকালই যেত। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই এই পুরনো মডেলে ফেরার চেষ্টা ফের আন্তরিক ভাবে শুরু করেছে সিপিএম। তা ছাড়া রীতিমাফিক পার্টিকর্মীদের এক দিনের  রোজগারও নির্বাচনী তহবিলে দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৬
Share:

প্রতিটি বুথ থেকে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা তুলতে হবে। যাতে বুথের দেওয়াল চুনকাম করা থেকে দেওয়াল লেখা, ঝান্ডা-ফেস্টুন, মাইক, ভোটের দিনের বুথ খরচ— সবই উঠে আসে।

Advertisement

এক কালের ‘সর্বহারার পার্টি’ তাই ফের কৌটো হাতে ভোটারদের দোরে-দোরে যাচ্ছে। খাতায়-কলমে অবশ্য তারা চিরকালই যেত। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই এই পুরনো মডেলে ফেরার চেষ্টা ফের আন্তরিক ভাবে শুরু করেছে সিপিএম। তা ছাড়া রীতিমাফিক পার্টিকর্মীদের এক দিনের রোজগারও নির্বাচনী তহবিলে দিতে বলা হয়েছে।

আপাতত জেলার বিভিন্ন প্রান্তে, সে কালীগঞ্জ হোক বা কৃষ্ণনগর, সিপিএম কর্মীদের লালঝান্ডা হাতে কৌটো, রসিদ, লাল শালু হাতে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে। যা দেখে বিরোধী নেতাকর্মীরা টিপ্পনী কাটছেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন কৌটো নাড়ানোর দরকার চলে গিয়েছিল। নানা জায়গা থেকে টাকার জোগান আসত। ২০১১ –এর পরে তহবিলে টান পড়েছে। কর্মীদের থেকে লেভি আদায় যেমন কমেছে, দলের তহবিলে মোটা অঙ্কের ‘দান’ও কমে গিয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে যা লোক-দেখানো অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল, তা-ই এখন বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া স্পষ্ট না হওয়ায় লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা এখনও করে উঠতে পারেনি বামফ্রন্ট। কিন্তু প্রতিটি মহল্লা থেকে টাকা তোলার কাজ চলছে পুরোদমে। শহর-গ্রামের বাজার-দোকান, গৃহস্থের দরজায় কড়া নাড়ছেন সিপিএমের নেতাকর্মীরা। চাঁদা চাওয়ার পাশাপাশি চলছে কুশল বিনিময়, হেসে দুটো কথা বলা, ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম কর্মীদের মুখে যে হাসি দেখতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন ভোটারেরা। সেই সঙ্গেই তোলা হচ্ছে স্লোগান, ‘‘বাম-কংগ্রেসের জোটপ্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।’’

বৃহস্পতিবার সারা দিনই পলাশির নানা এলাকায় দেখা গেল সেই দৃশ্য। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দেবাশিস আচার্য। ও দিকে, নাকাশিপাড়াতেও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নানা এলাকায় নির্বাচনের জন্য টাকা তুলেছেন। নাকাশিপাড়া এরিয়া কমিটির সদস্য তন্ময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলা থেকে নির্দেশ এসেছে, নাকাশিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটের খরচের জন্য প্রায় ছয় লক্ষ টাকা তুলতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মানুষ যে আমাদের পাশে আছে, তা তাঁদের অর্থসাহায্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে।”

বহু ভোটারই বলছেন, অনেক দিন পরে সিপিএম নেতা-কর্মীদের এ ভাবে ভোটের আগে রাস্তায় নামতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতায় থাকতে টাকা চেয়ে দরজায়-দরজায় ঘোরা তো দূরের কথা, নেতাদের ধারে-কাছে যাওয়া যেত না।

সিপিএম নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, কোনও দিনই নির্বাচনের জন্য আলিমুদ্দিন থেকে টাকা আসত না। আগেও নির্বাচনের জন্য রাস্তায় ঘুরে মানুষের থেকে টাকা তোলা হত। অন্য রাজনৈতিক দলের থেকে বামেদের খরচও কম। কারণ কমরেডরা নিজেরা দেওয়াল লেখেন, নিজেরাই পোস্টার লেখেন, সে সবের জন্য লোক ভাড়া করতে হয় না। এমনকি ভোটের দিন জলখাবারও কমরেডদের বাড়ি থেকে যায়। সেটুকু জনতার দানেই উঠে যায়।

সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্যের দাবি, ‘‘আঠারো বছর বয়স থেকে আমি পার্টির সঙ্গে যুক্ত। চিরকালই দেখে আসছি, এই ভাবে মানুষের টাকাতেই ভোট হয়েছে। কৌটো নেড়ে টাকা তোলা সিপিএমের অহঙ্কার। দল মানুষের ভালবাসার অর্থে চলে।”

তৃণমূলের কালীগঞ্জ ব্লক চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের টিপ্পনী, ‘‘ক্ষমতা যাওয়ার পরেই সিপিএমের ভালবাসা বেড়েছে! ওদের তো শুনি কত কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজ়িট করা আছে। ভোটে তা থেকেই খরচ করুক না, মানুষের টাকা নষ্ট

করা কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন