বদল চেয়েও বিকল্প মুখ পেতে জেরবার সিপিএম

বিকল্প দরকার। কিন্তু সেখানেও সঙ্কট! বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় হয়েছে। তার পর থেকে মনোবল হারানো সংগঠন প্রায় বসেই আছে! সাধারণ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা হলেও বিরাট কোনও সাড়া পড়েনি কর্মী মহলে। আন্দোলনের নামগন্ধ এখনও নেই বিশেষ। এই অবস্থায় মরিয়া দাওয়াই হিসাবে গণসংগঠনে মুখ বদলের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সিপিএম। কিন্তু বর্তমানদের সরিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কাদের আনা যাবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সমস্যা। বিকল্পের প্রক্রিয়াও তাই জটে বন্দি!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

বিকল্প দরকার। কিন্তু সেখানেও সঙ্কট!

Advertisement

বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় হয়েছে। তার পর থেকে মনোবল হারানো সংগঠন প্রায় বসেই আছে! সাধারণ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা হলেও বিরাট কোনও সাড়া পড়েনি কর্মী মহলে। আন্দোলনের নামগন্ধ এখনও নেই বিশেষ। এই অবস্থায় মরিয়া দাওয়াই হিসাবে গণসংগঠনে মুখ বদলের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সিপিএম। কিন্তু বর্তমানদের সরিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কাদের আনা যাবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সমস্যা। বিকল্পের প্রক্রিয়াও তাই জটে বন্দি!

আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, শ্রমিক সংগঠন সিটু এবং মহিলা সংগঠনের উপরের দিক মুখ বদলে ফেলতে চান সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। নীতিগত ভাবে সেই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েও গিয়েছে। মহিলা সংগঠনে অঞ্জু কর, মিনতি ঘোষদের বদলে নতুন মুখ নিয়ে আসার প্রক্রিয়া কিছুটা গতি পেয়েছে। জেলা সম্মেলন করে রাজ্য সম্মেলনে এসে মহিলা সমিতির নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু সিটু নিয়ে জট প্রবল! পুরীতে সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলন নভেম্বরেই। অথচ রাজ্য সম্মেলনের দিনক্ষণ এখনও পুরোপুরি চূড়ান্ত নয়। দলের কয়েকটি জেলার সম্পাদক পদেও রদবদল আনতে চায় আলিমুদ্দিন। সেখানেও বিকল্প মুখ খুঁজে পাওয়া নিয়ে সঙ্কটের জেরে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ঝুলেই আছে।

Advertisement

সদ্য অনুষ্ঠিত প্লেনামে দলের তরফে রীতিমতো রিপোর্ট পেশ করে বলা হয়েছিল, গণসংগঠনকে স্বাধীন ভাবেই কাজ করতে দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে গণসংগঠনের মাথায় কে বসবে, সিপিএম ঠিক করে দিচ্ছে কী ভাবে? দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, গণসংগঠনের স্বাধীনতার কথা মাথায় রেখেই বার করা হয়েছে মধ্যপন্থার কৌশল। প্লেনামেই ঠিক হয়েছে, রাজ্য বা জেলা স্তরে যে নেতা-নেত্রীরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাঁদের আর গণসংগঠনে দায়িত্ব দেওয়া হবে না। তাতে দু’টো দায়িত্বের কোনওটাই ঠিকমতো পালন করা হয় না। এই কৌশলেই
পুরনো কিছু মুখকে অব্যাহতি দিয়ে সিটু বা মহিলা সমিতিতে নতুন রক্ত আনতে চান সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু চাইলেই তার বাস্তবায়ন
হচ্ছে কই!

রাস্তায় আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে যুব সংগঠনের। তাদের সর্বভারতীয় সম্মেলন আসন্ন হলেও পরবর্তী রাজ্য সম্মেলন এক বছর পরে। তার আগে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক বা সভাপতি পদে আপাতত বদল আনতে চাইছেন না আলিমুদ্দিনের নেতারা। যা হওয়ার, হবে সম্মেলনে গিয়েই। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আপাতত সামনে বড় কোনও নির্বাচন নেই। সংগঠনে প্রয়োজনীয় রদবদল করে সাজিয়ে নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।’’ কিন্তু বিকল্প মুখের অভাব, কোথাও আবার বিকল্প নিয়ে দ্বন্দ্বে সেই সময়ও যে বয়ে যাচ্ছে, দলের অন্দরে মানছেন রাজ্য নেতারা।

গণসংগঠনের বাইরে দুই গুরুত্বপূর্ণ জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সম্পাদক বদলের কথা ভেবে রেখেছিল আলিমুদ্দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বাম পরিষদীয় দলের নেতা হয়ে যাওয়ার পরে জেলার দৈনন্দিন কাজ দেখভাল করা তাঁর পক্ষে সমস্যা হয়ে উঠেছে। কিন্তু সুজনবাবুকে জেলা থেকে অব্যাহতি দিলে কে সেই দায়িত্ব নেবেন, কয়েক মাসেও তা নিয়ে স্থির কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি! কেউ কেউ প্রাক্তন এক মন্ত্রীর কথা বলেছিলেন। বয়সজনিত কারণ দেখিয়ে আপত্তি তুলেছে অন্য অংশ। দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশের পছন্দ জেলার এক তরুণ, প্রাক্তন সাংসদ। কিন্তু তিনি নিজে আবার এমন দায়িত্ব নিতে খুব উৎসাহী বলে খবর নেই।

উত্তর ২৪ পরগনায় গৌতম দেব শারীরিক কারণেই দলের কাজে সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে পারছেন না। কিন্তু ওই জেলায় তাঁর কোনও বিকল্প এখনও নেই। এই অবস্থায় জেলার এক একটা এলাকায় এক এক জন নেতা আঞ্চলিক ভাবে ‘কাজ’ করে চলেছেন! অথচ উত্তর ২৪ পরগনায় কর্মী বাহিনী যথেষ্ট মজবুত। পরিস্থিতি বুঝেই দীর্ঘ দিন পরে আজ, বুধবার রাজারহাটে জেলা সম্পাদক হিসাবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার কথা গৌতমবাবুর। জেলা জু়ড়ে সমাবেশ এবং কিছু কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার কথা। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের অভাবে জেলায় দলের একাংশ আরও মনোবল হারাচ্ছে।

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘‘নেতৃত্ব বদল করাই সংগঠনকে চাঙ্গা করার একমাত্র রাস্তা, এমন নয়। পরিস্থিতি বিচার করে যেখানে যা প্রয়োজন, তেমন কাজই করা হবে।’’ সে কাজ হবে কবে, প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন