‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’
Minakshi Mukherjee

কাজ, শিক্ষার কী হাল, ঘুরে শুনছেন সেলিম-মীনাক্ষীরা

উত্তরবঙ্গের তুফানগঞ্জ থেকে নভেম্বরের শেষে শুরু হয়েছে সিপিএমের ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া হয়ে পূর্ব বর্ধমানের একাংশ ঘুরে যাত্রা এখন পৌঁছেছে হুগলি জেলায়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৭
Share:

চায়ের দোকানে আলাপচারিতায় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের কুসুমগ্রামে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’র ফাঁকে। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে মহা সমারোহে গীতা পাঠের আসর হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে ‘বাবরি মসজিদ’ গড়ার জন্য জমা পড়া অনুদানের টাকা গোনা হচ্ছে। আবার ব্রিগেডের মাঠে চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাদের মারধরে অভিযুক্ত যুবকদের কয়েক ঘণ্টার গ্রেফতার এবং জামিন-পর্বের পরে সংবর্ধনা দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহ যখন ফের ধর্মীয় আঁচে তাতিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে, সেই সময়েই জেলায় জেলায় ছোট ছ‌োট বৈঠকি সভায় স্থানীয় মানুষের মতামত শুনছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের রাজ্য স্তরের নেতাদের পাশাপাশি থাকছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। জেলায় জেলায় এই আলাপচারিতায় উঠে আসছে কাজের অভাব, বেহাল স্কুল, ফসলের দাম না-পাওয়ার যন্ত্রণার কথা।

উত্তরবঙ্গের তুফানগঞ্জ থেকে নভেম্বরের শেষে শুরু হয়েছে সিপিএমের ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া হয়ে পূর্ব বর্ধমানের একাংশ ঘুরে যাত্রা এখন পৌঁছেছে হুগলি জেলায়। বাসে পরিক্রমা, পদযাত্রা এবং বাইক মিছিলের সঙ্গে থাকছে এলাকাভিত্তিক সমাবেশ। কিন্তু এ বারের যাত্রা শুধুই মিছিল নয়। নানা জায়গায় দুপুর ও রাতের বিরতির ফাঁকে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন সিপিএমের যাত্রীরা। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম বারোমাসিয়ায় যেমন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এমন আলাপচারিতায় বসেছিলেন। উত্তরের চা-বলয় বা নদিয়ার চিনিকল এলাকাতেও একই কাজ করেছেন দলীয় নেতারা। সিপিএম সূত্রের খবর, এই মত বিনিময়ে সাধারণ ভাবে বেশি উঠে আসছে কাজ এবং শিক্ষার সমস্যার কথা। উত্তরবঙ্গ থেকে নদিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বক্তব্য, এলাকায় তেমন কাজ ও রোজগারের ব্যবস্থা নেই। পরিযায়ী হয়ে যাঁরা বাইরে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেককেই এখন আবার বাংলাভাষী বলে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। এলাকার সরকারি স্কুলে শিক্ষক নেই, পড়াশোনার নিয়মিত চল নেই। বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠানোর খরচ বেশি। চিকিৎসা পরিষেবা বা রাস্তার দুর্দশার কথাও আসছে অনেক জায়গায়। সেলিমের কথায়, ‘‘কাজ এবং শিক্ষার প্রশ্ন সব চেয়ে বেশি, প্রায় সব জায়গাতেই উঠে আসছে। গ্রামের মানুষ জানাচ্ছেন কৃষির সঙ্কট এবং ফসলের দাম না-পাওয়ার কথা। উত্তরবঙ্গে প্রকৃতি ধ্বংসের কথাও এসেছে। আমরা যখন শহরাঞ্চলের কাছাকাছি যাব, শ্রমিকদের সমস্যার কথাও আসবে।’’

‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’র পথে সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মেমারিতে। — নিজস্ব চিত্র।

নবদ্বীপ হয়ে পূর্ব বর্ধমানে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ ঢোকার পরে কুসুমগ্রামের এক চায়ের দোকানে বসেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সেখানেই স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতা জমেছিল। স্থানীয় মানুষেরই প্রশ্ন, এখানে কাজ-বাজ নেই, রোজগারের উপায় কম। শুধু হিন্দু-মুসলিম চলছে। আপনারা এত ঘুরছেন, যাত্রা করছেন, এতে কি কিছু বদলাবে? মীনাক্ষী তাঁদের বলেছেন, ‘‘বদল আনতে গেলে সরকারকে বদলাতে হবে। সেটা পারলে আপনারাই পারবেন। আমরা তো এটাই বলছি যে, হিন্দু-মুসলিমের নামে মানুষকে লড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সংবিধান এ কথা বলে না। মন্দির-মসজিদের রাজনীতির নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে পেটের ভাতের কথা।’’

সেলিম, মীনাক্ষীদের পাশাপাশি সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরী-সহ সিপিএমের বেশ কিছু নেতা দফায় দফায় যাত্রাপথে শামিল হচ্ছেন। দলের যুব ও ছাত্র নেতাদের বড় অংশই এই যাত্রায় ঘুরছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘মন্দির-মসজিদ দিয়ে সব কিছু ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ তাঁদের জীবন-জীবিকার সমস্যার কথাই বলতে চান। ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ তাঁদের সেই কথাই শুনছে এবং বলছে।’’

জেলায় জেলায় স্থানীয়, প্রান্তিক মানুষের কথা শুনে পুঁজি সঞ্চয় করছেন সেলিম-মীনাক্ষীরা। কিন্তু ভোটে তার ফসল উঠবে কি না, ঘুরছে সে প্রশ্নই!

নবদ্বীপ থেকে শুরু করে হেমতপুর, কুসুমগ্রাম, সাতগাছি হয়ে মেমারিতে সমাবেশ হচ্ছে এ দিন। সেখানে আছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তার পরে পান্ডুয়া দিয়ে হুগলিতে ঢুকবে যাত্রা, সেখানেই রাতের বিরতি, শনিবার পান্ডুয়া থেকে মগরা, বাঁশবেড়িয়া, চুঁচুড়া, চন্দননগর, বৈদ্যবাটী, বেগমপুর, জনাই, চণ্ডীতলা হয়ে ডানকুনিতে থামবে যাত্রা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন