জল কই, হাহাকার দুর্গাপুরে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিপিএল টাউনশিপে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আবাসনে এ দিন জল আসেনি। এ ছাড়াও শহরের যে এলাকাগুলিতে ডিপিএল জল সরবরাহ করে সেগুলিতেও জল ছিল না। ডিপিএল সূত্রে জানা যায়, পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে দিনে ১২ এমজিডি জল দরকার।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share:

সারাই: দুর্গাপুর ব্যারাজে লকগেট মেরামতির কাজ চলছে শনিবার। ছবি: বিকাশ মশান

বেলা সাড়ে ১১টা। আচমকা পাড়া জুড়ে রব, ‘জল এসেছে, জল এসেছে।’ অমনি, বালতি হাতে বেরিয়ে পড়লেন বাসিন্দারা। শনিবার দৃশ্যটা দুর্গাপুরের বিধাননগরের। প্রশাসনের পাঠানো ট্যাঙ্কার থেকে জল নেওয়ার ভিড়। বাসিন্দারা জানান, ব্যারাজে বিপত্তির জেরে পানীয় জলের জন্য এমনই হাহাকার দেখা দিয়েছে শহর জুড়েই। তাঁরা জানান, শুক্রবার সকালে কিছুক্ষণের জন্য জল এসেছিল কলে।

Advertisement

দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ করে দুর্গাপুর পুরসভা, ডিএসপি, ডিপিএল, এডিডিএ। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে একটি আট কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যানাল বেরিয়ে গিয়েছে। সেই ক্যানাল থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে তা পরিশোধন করে পানীয় জল হিসেবে সরবরাহ করে। প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, ডিএসপি দিনে ২০ এমজিডি (মিলিয়ন গ্যালন পার ডে) জল নেয়। তার মধ্যে ৫ এমজিডি জল এএসপি-তে, বাকি ১৫ এমজিডি জল পরিশোধন করে ডিএসপি টাউনশিপ, সিআইএসএফ কলোনি, এনআইটি, এসবিআই কলোনি, সিএমইআরআই কলোনি, ডিভিসি কলোনি প্রভৃতি জায়গায় সরবরাহ করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে পুরসভাও প্রায় ২৫ টি ট্যাঙ্কারে করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জল পাঠিয়েছে। এ ছাড়া আসানসোল পুরসভা থেকে আরও ২০ টি ট্যাঙ্কার আনানো হয়। বাঁকুড়া পুরসভাও দু’টি ট্যাঙ্কার পাঠায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিপিএল টাউনশিপে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আবাসনে এ দিন জল আসেনি। এ ছাড়াও শহরের যে এলাকাগুলিতে ডিপিএল জল সরবরাহ করে সেগুলিতেও জল ছিল না। ডিপিএল সূত্রে জানা যায়, পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে দিনে ১২ এমজিডি জল দরকার। টাউনশিপে পানীয় জলের জলাধার থাকলে সেখানে জল ধরে রাখা যেত বলে দাবি টাউনশিপের বাসিন্দা তথা ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের। তিনি বলেন, ‘‘জলাধার থাকলে দু’তিন দিন কাজ চালিয়ে নেওয়া যেত। এ ভাবে পানীয় জলের জন্য সমস্যায় পড়তে হতো না।’’

Advertisement

সেচ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে রবিবার বিকেল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই পানীয় জল নিয়ে এই দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।

তবে তাপবিদ্যুৎগুলি নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানা গিয়েছে। অন্ডালে ডিএসটিপিএস-এর ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিট রয়েছে। সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুবোধানন্দ ঝা জানিয়েছেন, তিন-চার দিনের জল মজুত আছে। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল বিশ্বাসও একই কথা জানিয়েছেন। তবে ডিপিএল-এ এক দিনের জল মজুত রয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। ডিএসপি, এএসপি-সহ নানা কারখানায় ‘কুলিং প্ল্যান্ট’গুলিতেই শনিবার কোনও সমস্যা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিন মজুত জলেই কাজ চলেছে।

গেটটি সারাইয়ের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। কারণ জানা গিয়েছে, মাইথন থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজে জল পৌঁছাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। তারপরে ব্যারাজে জল জমতেও সময় লাগবে। সব মিলিয়ে গেট সারাইয়ের পর ঘণ্টা দশেক সময় লাগবে। তবে এ দিন রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতরের সচিব গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিভিসি, ডিএসপি কর্তৃপক্ষও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন