প্রতীকী ছবি।
গুজব, আপত্তিকর ছবি ছড়ানো থেকে নানা ধরনের টোপে টাকা হাতানোর মতো দুষ্কর্মের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে সাইবার প্রযুক্তি। এ বার বৃত্তি নিয়েও শুরু হয়ে গেল সাইবার প্রতারণা!
সংখ্যালঘু বৃত্তির আবেদনে ভুয়ো নাম ঢোকানো হচ্ছে বলে জেলাশাসকদের সতর্ক করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক বিশ্বাস জেলাশাসকদের চিঠি লিখে ভুয়ো আবেদনকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ভুয়ো বৃত্তি চক্রে পড়ুয়াদের একাংশ এবং সংশ্লিষ্ট স্কুল-কর্তৃপক্ষের একাংশের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন এমডি। প্রশ্নের মুখে পড়েছে নথিভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা কেন্দ্রের ভূমিকাও। কারণ, গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ আবেদনকারী তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়েই বৃত্তির আবেদন জানায়।
সংখ্যালঘুদের বৃত্তি দিতে কেন্দ্রের ‘মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ’ প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের বাইরে থাকা নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়াদের রাজ্য বৃত্তি দিয়ে থাকে নিজের টাকায়। এখন সেই বৃত্তির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করছে নিগম। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পড়ুয়ারা এই আবেদন করতে পারবে। পরের সাত দিনে স্কুলই পড়ুয়ার আবেদনের সত্যতা যাচাই করে জেলাশাসকের দফতরে পাঠাবে। ইতিমধ্যে বহু স্কুলই পড়ুয়াদের দরখাস্ত জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়েছে। সেখানেও ভুয়ো আবেদনকারী ধরা পড়েছে বলে জেনেছে নিগম। অক্টোবর জুড়ে জেলাশাসকের দফতর স্কুলের পাঠানো নথি যাচাই করবে। তার পরে তা যাবে বিত্ত নিগমের কাছে।
বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পড়ুয়াদের অনলাইনে আবেদন করতে সহায়ক তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা কেন্দ্রগুলি ভুয়ো আবেদন চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারাই অনেক ক্ষেত্রে ভুয়ো আবেদন স্কুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। স্কুলের জন্য নির্দিষ্ট আইডি এবং পাসওয়ার্ড চলে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা কেন্দ্রে। ফলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে ভুয়ো নাম বৃত্তি পাওয়ার তালিকায় ঢুকছে। স্কুলের হয়ে যাচাই করার কাজও করে দিচ্ছে বেসরকারি সহায়ক সংস্থাগুলি।
নিগমের এমডি জেলাশাসকদের লিখেছেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, স্কুলের তরফে ওই ভুয়ো তালিকা যাচাই না-করে পাঠিয়েও দেওয়া হচ্ছে! রাজ্যের নোডাল অফিসার সেই ভুয়ো নাম খুঁজে বার করতে পারছেন না। এতে আসল আবেদনকারীরা বঞ্চিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান পিবি সেলিম বলেন, ‘‘বৃত্তির আবেদন যাচাইয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জেলাশাসকদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে প্রকৃত পড়ুয়ারাই সংখ্যালঘু বৃত্তি পায়, সেই চেষ্টা চলছে।’’
২০১৫-য় সংখ্যালঘু প্রাপকদের তালিকা যাচাই করতে গিয়ে বেশ কিছু নকল নাম ধরা পড়েছিল। কয়েকটি অভিযোগও দায়ের হয়। গ্রেফতার হয় বেশ কিছু আবেদনকারী ও নকল চক্রের চাঁই। প্রতি বারেই কয়েক লক্ষ পড়ুয়া সংখ্যালঘু বৃত্তি চেয়ে আবেদন করে। অনেক পড়ুয়া সরকারের ঠিক করে দেওয়া তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে দরখাস্ত করে। এ বারেও দুই দিনাজপুর ও মালদহ থেকে এই ধরনের ভুয়ো দরখাস্তের খবর পেয়েছে নিগম। জেলাশাসকদের বেশ কয়েক দফা পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলিকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে বলার পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আইডি এবং পাসওয়ার্ড যাতে কোনও ভাবেই কাউকে দেওয়া না-হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।