Cyclone Amphan

আমপান তাণ্ডবে রাজ্যে মৃত ৮০, পুনর্গঠনে হাজার কোটি

প্রশাসনের প্রাথমিক হিসেবে, আমপান ৪০০ কিমি এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। সাত-আটটি জেলা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত, আরও চার-পাঁচটি জেলা বিপর্যস্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৪:০২
Share:

আমপান-তাণ্ডবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত দুই যুবকের দেহ সরানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে হাওড়ার ব্যাঁটরা এলাকার সানপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ঘূর্ণিঝড় আমপানের হামলায় রাজ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কলকাতায় ১৯ জন এবং বিভিন্ন জেলায় ৬১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতি মেরামতে বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ভাবে ১ হাজার কোটি টাকাও বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কট চলছে। তাই বিপর্যয় মোকাবিলার প্রতিটি টাকা হিসেব করে খরচ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণও দেবে রাজ্য।

Advertisement

প্রশাসনের প্রাথমিক হিসেবে, আমপান ৪০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। সাত-আটটি জেলা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত, আরও চার-পাঁচটি জেলা বিপর্যস্ত। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করতে প্রতিটি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘১৭৩৭ সালে এমন দুর্যোগ হয়েছিল। সতর্কবার্তা পেয়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছিল বলে লক্ষাধিক প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। দুই ২৪ পরগনা ও কলকাতায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর তীব্রতা আয়লার থেকেও অনেক বেশি। এ করোনার থেকেও ভয়াবহ দুর্যোগ।’’

পূর্ত দফতরকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, রাস্তায় বারবার তাপ্পি মারার (প্যাচ-ওয়ার্ক) বদলে অন্তত তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী রাস্তা বানাতে ঠিকাদারকে দায়বদ্ধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সড়ক যোগাযোগমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে রাস্তার পরিকল্পনা করতে মুখ্যসচিব এবং পূর্তসচিবকে নির্দেশ দেন তিনি। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সড়কের সঙ্গে রাজ্য সড়ককে যুক্ত করে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আর্থিক অবস্থা খারাপ। কেন্দ্রের থেকে কিছু পাইনি। আয় কিছুই নেই। পুরো খরচ ঘর থেকে করতে হচ্ছে। কী ভাবে চলবে জানি না।’’ ইতিমধ্যেই বকেয়া ৫৩ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে দাবি করেছে নবান্ন।

Advertisement

আবাস যোজনা, সেচ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পুকুর পরিষ্কার, মাছ ছাড়া এবং ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পকে সংযুক্ত করে পুনর্গঠনের কাজ করবে প্রশাসন। পানীয় জল, ওষুধ, খাবার, মেডিক্যাল ক্যাম্প, রেশন-অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবা অবিলম্বে সচল করতে চাইছে সরকার। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরির পাশাপাশি কৃষকদের সাহায্যের রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। আমপান-পরবর্তী পুনর্গঠনে মন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে তাঁর নির্দেশ, জেলাশাসকদের সহযোগিতা করতে হবে মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের।

প্রশাসন জানিয়েছে, কলকাতায় জলে ডুবে চার জন এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। রিজেন্ট পার্কে দেওয়াল চাপা পড়ে এক মহিলা ও তাঁর ছেলে এবং কড়েয়ায় টালির চাল ভেঙে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে উড়ে আসা টিনের চালার আঘাতে শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও, ঝড়ে আরও দু’জনের মৃত্যু সংবাদ পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃতদের চার জনের পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। বুধবার রাতে বাড়ি চাপা পড়ে সাঁতরাগাছিতে মৃত্যু হয় রজত পোলেন নামে এক যুবকের। এ দিন ভোরে বেলুড়ে বিকাশ সিংহ নামে এক যুবক ছেঁড়া তার সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট

হয়ে মারা যান। টিকিয়াপাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় খালেদ নিশাদ নামে এক ব্যক্তির। ব্যাঁটরার সানপুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই যুবকের। গাছ পড়ে ও জলমগ্ন হয়ে বিধ্বস্ত হাওড়ার বিভিন্ন এলাকা।

উত্তর শহরতলি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ৪৫ হাজার বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ জন মৃত। ৬৫ জন আহত হয়েছেন। জেলার প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত। উপড়ে পড়েছে প্রায় ১১ হাজার গাছ।

পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া মহকুমার চার জন এবং কাঁথি মহকুমার দু’জন মারা গিয়েছেন। আহত অন্তত ১০ জন। নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকের হাজার ছয়েক বাসিন্দা ঘরছাড়া। জেলার ক্ষয়ক্ষতির ৪০ শতাংশ রিপোর্ট এখনও আসেনি। এগরা মহকুমাতেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’জন মারা গিয়েছেন। দাঁতন, কেশিয়াড়ি, মোহনপুরেই ক্ষতির পরিমাণ বেশি।

৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে নদিয়ায়। আহত ৬১। প্রচুর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। নিরাপদে সরানো হয়েছে ৩৩৬১ জনকে। মুর্শিদাবাদে হাজার পাঁচেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দা। ক্ষতি হয়েছে ধান, আম, লিচু, পান, পাট, তিল, আনাজ-সহ নানা ফসলের। সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফল এবং ১ লক্ষ ৫৮ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

পূর্ব বর্ধমানে মঙ্গলকোটে দেওয়াল চাপা পড়ে রাধারমন ঘোষ (৭২) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা। বোরো ধান ও তিল চাষে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৭৬.৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গিয়েছিল। জমিতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির জলে ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ১২,৩৪০ হেক্টর জমিতে চাষ করা তিল জলের তলায় রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আনাজও নষ্ট হতে বসেছে বলে অনুমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন