Cyclone Amphan

এখনও কেন এত ভোগান্তি, বিক্ষোভ

এক দিকে করোনা, তার উপরে আমপান-পরবর্তী বিপর্যয়ে তৈরি অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি কবে? স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে থানা কারও তরফেই সদুত্তর না পেয়ে শেষে শুক্রবার সকাল থেকে রাস্তায় নামেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৪:৫৩
Share:

বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

ঝড় থেমেছে ঠিকই। তবে কলকাতা ‘শান্ত’ হয়নি! ফুঁসছে বিক্ষোভে।

Advertisement

আমপান যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও শহর-শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় অন্ধকার। দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে রয়েছে গলি থেকে রাজপথে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের চেহারায় জল-বিদ্যুৎহীন বহু এলাকা।

এক দিকে করোনা, তার উপরে আমপান-পরবর্তী বিপর্যয়ে তৈরি অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি কবে? স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে থানা কারও তরফেই সদুত্তর না পেয়ে শেষে শুক্রবার সকাল থেকে রাস্তায় নামেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। ই এম বাইপাস থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা, হরিদেবপুর, গড়িয়া, যাদবপুর, বেলগাছিয়া, বিজন সেতু, রাজা এসসি মল্লিক রোড-সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে বিক্ষোভ, অবরোধ। কামারহাটি, পানিহাটি, দমদম, হাওড়া, ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম-সহ শহরতলিতেও চলেছে অবরোধ। বাগুইআটির যুগিপাড়ায় আটকে রাখা হয় পুলিশকেও। রাতে উত্তাল টিটাগড়ে বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের কর্তা-সহ ১৩ জনকে আটকানোর অভিযোগ ওঠে। টিটাগড়েই মুচিপাড়ায় খড়বোঝাই লরিতে আগুন ধরানোরও অভিযোগ। ফলে বিটি রোডে যানজট, আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা মিলিয়ে ঘোরালো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

Advertisement

সার্ভে পার্কে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ নেই। প্রতিবেশীদের থেকে জল চেয়ে খেতে হচ্ছে অনেককে। থানায় গেলে মহিলাদের উপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পর্ণশ্রীর একটি কেন্দ্রীয় সরকারি আবাসনের বাসিন্দাদের। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা। সকলে ধৈর্য রাখুন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।’’ অভিযোগ, অনেক জায়গাতেই দেখা নেই কাউন্সিলরদের। এ দিন কলকাতার ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাছ সরানোর দাবিতে জেমস লং সরণি এবং এস এন রায় রোডের সংযোগস্থলে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধ চলে। শেষে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরিস্থিতি সামলান। আবার হাওড়ার বেলুড়ে বিদ্যুতের দাবিতে বাসিন্দাদের অবরোধে শামিল হন বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। বকুলতলা, ঝিঙেপাড়া-সহ হুগলির বিভিন্ন বিদ্যুৎহীন এলাকাতেও এ দিন অবরোধ-বিক্ষোভ চলে।

বুধবার থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিল্ক কলোনি এলাকায় রেন্টাল হাউজিংয়ের গেটের সামনে বিশাল গাছ বিদ্যুতের খুঁটি সমেত পড়ে থাকলেও এ দিন বিকেলে তা সরানোর কাজ শুরু হয়। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘ঝড়ের ৪০ ঘণ্টা পরে গাছ কাটা হলেও বিদ্যুৎ কবে আসবে, জানা নেই।’’ বেলগাছিয়া, অজয়নগর, নাকতলা, বালিগঞ্জ-সহ শহরের বি‌ভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’দিন কেটে গেলেও গাছ সরানো হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ না-থাকায় পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে জলের সঙ্কট। রাস্তায় কল থেকে জল টেনে বহুতলে তুলতে হচ্ছে। মোবাইল, ল্যাপটপ চার্জ দিতে না পারায় প্রায় যোগাযোগহীন হয়ে থাকতে হচ্ছে খাস শহরে। টালিগঞ্জ থেকে বাঁশদ্রোণী পর্যন্ত এলাকা গাছ পড়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন এখনও। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে ত্রাণ শিবিরে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সফর দলের তিনটি চপার যখন গেল, ভাবলাম খাবারের প্যাকেট ফেলবে।’’

মধ্যমগ্রাম, দমদমের কিছু জায়গায় বাসিন্দারা জেনারেটর ভাড়া করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছেন। আবার বেলঘরিয়া, পানিহাটির অনেক জায়গাতেই অভিযোগ উঠেছে, জমা জলে রাস্তার কল ডুবে থাকলেও পুরসভার পানীয় জলের গাড়ি সর্বত্র পৌঁছয়নি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এই সব ঘটনার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন