এ বার বন্‌ধ উঠুক, চাইছেন পাহাড়বাসী

এ দিন মিরিকে দেখা গেল পুরসভার অফিস খুলিয়ে ত্রাণ বিলি করলেন তৃণমূলের পুর চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাই। পুর চেয়ারম্যান বললেন, ‘‘বৃষ্টিতে ধসে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ত্রিপল, পলিথিন দরকার দুর্গতদের। বন্‌ধ বলে ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই অফিস খুলিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিলি করলাম।’’

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৪
Share:

আড়ালে-আবডালে দোকানপাট খোলার প্রবণতা তো ছিলই। যেখান থেকে নিয়মিত চাল-ডাল-আলু-ডিম-সয়াবিন-চাউমিন কিনতে দেখা যাচ্ছিল মোর্চার বড়-মেজ-সেজ অনেক নেতার পরিবারের লোকজনকেও। যদিও সরাসরি বন্‌ধকে উপেক্ষার সাহস দেখাতে চাননি কেউই। কিন্তু, মঙ্গলবার সকাল থেকে দেখা গেল, অনেকেই ‘সাহস’ করে স্বাভাবিক জনজীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন। নবান্নে আলোচনার দিনক্ষণ ঘোষণার পরে তো খুব শিগগির ব্যবসা আবার চালু হবে ধরে নিয়ে অফিস-দোকান, গাড়ি পরিষ্কারের ধূম পড়েছে।

Advertisement

যেমন, এ দিন মিরিকে দেখা গেল পুরসভার অফিস খুলিয়ে ত্রাণ বিলি করলেন তৃণমূলের পুর চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাই। পুর চেয়ারম্যান বললেন, ‘‘বৃষ্টিতে ধসে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ত্রিপল, পলিথিন দরকার দুর্গতদের। বন্‌ধ বলে ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই অফিস খুলিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিলি করলাম।’’

আবার দার্জিলিঙের চকবাজারে কিছু দোকান দিনেদুপুরেই খোলা রাখা হল। কালিম্পঙের সদর এলাকাতেও চায়ের দোকান খুলল। কার্শিয়াং থেকে বেশ কয়েকটি ছোট গাড়ি সারাদিনে শিলিগুড়িতে যাতায়াত করল। কোথাও বাধার মুখে পড়েননি কেউ। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ছোট গাড়ির স্ট্যান্ডেও উৎসাহ-উদ্দীপনার ঝিলিক। ছোট গাড়িতে পাহাড় থেকে নেমেছেন নিমা লিম্বু, নরবু লামা, মহেশ প্রধান, সঞ্চিতা তামাঙ্গের মতো অনেকেই। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিমা যাচ্ছেন হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে। বাইপাস সার্জারির পরে বছরে এক বার পরীক্ষা করাতে যেতে হয় দক্ষিণবঙ্গে। নিমার স্ত্রী গীতা দেবী বললেন, ‘‘কাঁহাতক বন্‌ধ সহ্য করা যায়! নেতাদের বলেছি, আমরা গাড়ি নিয়ে যাব। কেউ বাধা দেয়নি।’’ নরবু, মহেশ দু’জনের ছেলে কলকাতায় আইন কলেজে পড়াশোনা করছেন। ওঁরা বললেন, ‘‘মিটিং-মিছিলে যেতে হয়। সেটা ঠিক আছে। তা বলে গ্রেনেড, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ আমরা মানতে পারছি না। বন্‌ধটা এ বার উঠুক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বোরখার ফাঁকে জয়ীর চোখ

এমবিএ-র ছাত্রী সঞ্চিতা জানান, পাহাড়ের নেতারা তাড়াতাড়ি বন্‌ধ না তুললে সাধারণ মানুষ দল বেঁধে রাস্তায় নামা শুরু করে দেবে। তিনি বলেন, ‘‘সুবাস ঘিসিঙ্গয়ের ডাকা টানা বন্‌ধ উপেক্ষা করে এক দিন পাহাড়ে কয়েক জন মানুষ মোমবাতি নিয়ে নেমেছিলেন। তার পরে সেই মিছিলে কাতারে কাতারে ভিড় হয়েছে। ঘিসিঙ্গ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এটা এখনকার নেতারা ভুলে যাচ্ছেন কেন?’’

মোর্চা, জিএনএলএফের গুরুঙ্গ ঘনিষ্ঠ নেতারাও অনেকে একান্তে বলছেন, ২০০৭-এর সেই বন্‌ধ বিরোধিতায় পাহাড়বাসীর পথে নামাটা ভোলেননি। তাই জিএনএলএফ নেতারা বন্‌ধ উঠিয়ে আলোচনার পথ ত্বরান্বিত করতে চিঠি দিয়েছেন। মোর্চা নেতারা চিঠির বিরোধিতা দূরের কথা, আলোচনায় ডাক পাওয়ার অপেক্ষা করছেন। তাই ট্যুর অপারেটর প্রদীপ রাই, গাড়ি চালক তিলক সুনদাস কিংবা হোটেল মালিক সঞ্জন মুখিয়ারা জানালেন, সেপ্টেম্বর থেকে পাহাড় স্বাভাবিক হবে ধরে নিয়ে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকই যোগাযোগ শুরু করেছেন।

যদি আলোচনার পরে বন্‌ধ তোলা না হয়? তা হলে আবার টর্চ-মোমবাতি, লণ্ঠন হাতে বন্‌ধ বিরোধিতায় নামার কথা ভাবছেন পাহাড়ের অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন