অস্ত্র কিনতে কেরল থেকে মুর্শিদাবাদে

কলকাতায় জালে দাউদ-সঙ্গীর চেলা

সরাসরি যোগ নয়। তবে ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তার যোগটা খুব দূরেরও নয়। দাউদের নির্দেশেই কেরলের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় ধরা পড়ে জামিনও হয়।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

সরাসরি যোগ নয়। তবে ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তার যোগটা খুব দূরেরও নয়। দাউদের নির্দেশেই কেরলের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় ধরা পড়ে জামিনও হয়। এ বার আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে এসে কলকাতায় ধরা পড়ল কেরলের সেই দাগি দুষ্কৃতী আবু বকর সিদ্দিকি ওরফে নুর শাহ। তার এক সঙ্গীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

গত শুক্রবার, ষষ্ঠীর গভীর রাতে ২৬ বছরের নুর এবং বছর চব্বিশের সিহাবউদ্দিন ওরফে হরিশকে হাওড়া সেতু থেকে পাকড়াও করেন লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা। ধৃতদের কাছে পাওয়া গিয়েছে দু’টি নাইন এমএম পিস্তল এবং বুলেটের তিনটি খালি ম্যাগাজিন। দু’জনের বিরুদ্ধেই কেরলে খুন, অপহরণ, তোলাবাজি এবং চোরাচালানের বিস্তর মামলা চলছে।

উৎসবের মরসুমে দক্ষিণ ভারত থেকে দুষ্কৃতীদের কলকাতায় আগমন খুব পুরনো ব্যাপার। তবে নুর-হরিশ মোটেই ছিঁচকে দুর্বৃত্ত নয়। ছোটখাটো চুরি-ছিনতাই করতে তারা এসেছিল বলে বিশ্বাস করেন না গোয়েন্দারা। তা হলে পুজোর সময়েই তারা কেরল থেকে কলকাতায় কেন?

Advertisement

গোয়েন্দাদের জেরায় নুর ও হরিশ জানিয়েছে, ঠিক কলকাতা নয়, তারা এসেছিল মুর্শিদাবাদে। কেরলে বেআইনি অস্ত্র পেতে সমস্যা হচ্ছে। তাই তারা মুর্শিদাবাদ থেকে পিস্তল সংগ্রহের চেষ্টায় ছিল। কেরলের জেলে থাকাকালীন অন্য বন্দির কাছে মুর্শিদাবাদের এক অস্ত্র কারবারির কথা শুনেছিল নুর। এ বার এখানে এসে সেই কারবারির কাছ থেকে তারা অস্ত্রও কিনেছে। কিন্তু ফেরার পথেই বমাল ধরা পড়ে গেল।

এই বক্তব্য তদন্তকারীরা পুরোপুরি বিশ্বাস করছেন, এমন নয়। গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, অস্ত্র কিনতে নয়। নিশ্চয়ই কোনও কাজের বরাত পেয়ে এখানে এসেছিল নুর ও হরিশ। এক তদন্তকারী অফিসারের জানান, নুর-হরিশের মতো দুষ্কৃতীরা ‘সুপারি’ নিয়ে কাজ করে। এবং যেখানে কাজ করার কথা, অস্ত্র জোগাড় করে তার কাছাকাছি কোনও জায়গা থেকেই। এটাই দস্তুর। ‘‘তাই পশ্চিমবঙ্গ বা পড়শি কোনও রাজ্যে কাজের বরাত পেয়েই তারা এসেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ঠিক কোথায় কোন কাজের বরাত পেয়ে তাদের আগমন, তা জানতে আরও জেরা করা হচ্ছে ধৃতদের,’’ বললেন ওই তদন্তকারী। ধৃতদের কাছে পাওয়া দু’টি পিস্তল ৩৫ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। ওদের জেরা করে মুর্শিদাবাদের সেই অস্ত্র কারবারির হদিস পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, দাউদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ না-থাকলেও নুর ও হরিশ লতায়পাতায় ওই ডনেরই চক্রের দুষ্কৃতী। কেরলে দাউদের হয়ে যাবতীয় কাজকর্ম করে আব্দুল হামিদ ওরফে পুট্টু। নুর-হরিশ সেই পুট্টুর শাগরেদ। এবং সেই সূত্রেই কেরলের ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত ছিল দু’জন।

কী ভাবে? কেরল পুলিশ সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে মহম্মদ কুঞ্জি নামে কাসারগড়ের এক বড় ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ কোটি টাকা তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তাতে কাজ না-হওয়ায় দু’দিন গুলি চালানো হয় ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে। হামলার দু’দিনের মধ্যে কোনও দিনই ওই ব্যবসায়ী বাড়িতে ছিলেন না। বুলেট-হামলায় তাঁর পরিজনদেরও আঘাত লাগেনি। সেই ঘটনায় পুট্টু, নুর, হরিশ-সহ দলের অনেকেই ধরা পড়ে। পুট্টুকে জেরা করে এবং তার মোবাইলে দাউদের সঙ্গে বহু বার কথোপকথনের রেকর্ড ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ কোটি টাকার সোনার বাট ছিল। তার সমমূল্যের অর্থ দাবি করে প্রথমে হুমকি দেওয়া হয়। কাজ হাসিল না-হওয়ায় পরে চালানো হয় গুলি। আর দাউদের নির্দেশে দলবল নিয়ে ‘অপারেশন’ চালায় পুট্টু।

কাসারগড় জেলার পুলিশ সুপার টমসন জোস বুধবার আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, ‘‘কর্নাটকের সীমানা বরাবর কেরলের বিস্তীর্ণ এলাকায় দুর্বৃত্তদের একটি ‘গ্যাং’ কাজ করছে। তারা চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, খুন, তোলাবাজিতে জড়িত। নুর-হরিশ সেই দলেরই সদস্য। ওরা কেরলের দাগি দুষ্কৃতী। খুন, অপহরণ, তোলাবাজির অনেক মামলায় অভিযুক্ত। তবে কিছু দিন যাবৎ ওরা জামিনে মুক্ত ছিল।’’ এসপি বলেন, ‘‘নুর-হরিশকে জেরা করতে আমাদের জেলা পুলিশের একটি দল দু’তিন দিনের মধ্যেই কলকাতায় যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন